চট্টগ্রাম মেডিকেলে র‍্যাবের হানা, সক্রিয় ৬ সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাঁপ, আটক ৩৯ দালাল

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সক্রিয় রয়েছে ৬ সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট দালালের মাধ্যমে রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায় বিভিন্ন প্রলোভনে। তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয় রোগী ও স্বজনরা। এবার চমেক হাসপাতালে সক্রিয় এমন ৩৯ দালালকে আটক করেছে র‌্যাব-৭।

বুধবার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এ অভিযান চালানো হয়। আটকের পর তাদের বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানা যায়, অভিযানে আটক ৩৯ দালালের মধ্যে ১৪ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত৷

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, সিন্ডিকেট ও দালালচক্র ধরতে এ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা গ্রামের দরিদ্র-অসহায় জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের দালালচক্র রয়েছে। তারা নানা উপায়ে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম মেডিকেলে পুরুষের সঙ্গে দালালি করে নারীও

আটক দালালদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার রোগীকে ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেওয়ার পর তারা রোগীদের স্বল্প খরচে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। একজন রোগী নিয়ে যেতে পারলে দালালরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কমিশন পায়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকপক্ষ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, অটোরিকশা এবং ইজিবাইক চালকদের নিয়ে দালালচক্র তৈরি করে থাকে। এসব দালাল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা বর্ণনা দিয়ে রোগীদের আস্থার সংকট তৈরি করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। এছাড়া চিকিৎসকরা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া শয্যা ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেটচক্র প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া সাধারণ রোগী বিভিন্ন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়। প্রথমেই জরুরি মুহূর্তে রোগী বহনের ট্রলি থেকে শুরু করে শয্যা/ওয়ার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালরা অর্থ হাতিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে প্রকৃত রোগের কথা বাড়িয়ে তাকে মরণব্যাধি ক্যান্সার বা টিউমার বা অন্য কোনো বড় ধরনের রোগের কথা বলে বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করায়। ফলে রোগীরা সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এতে অধিক অর্থ ব্যয় করে রোগী ও স্বজনরা সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। দালালদের প্রলোভনে পরে মানহীন হাসপাতালে যাওয়ায় সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও অপ্রতুলতার গুজব ছড়িয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স অধিক টাকায় ভাড়া দেয়। এমনকি চিকিৎসাধীন কোনো রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার সময় এবং কোনো রোগী মারা গেলে হাসপাতাল থেকে তার লাশ বহনেও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দালালচক্রের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম মেডিকেলে ওষুধ থাকার পরও পায় না রোগীরা

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে দালালরা তাদের চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে যায়।

কমিশন বাণিজ্য সিন্ডিকেট রোগী হাসপাতালে আসার পর ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী বহনের জন্য ট্রলি, শয্যা/ওয়ার্ড পাইয়ে দেওয়া, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরিদর্শন পেছন থেকে সামনে নেয়া, স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেওয়া, তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা, স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের ওষুধ ক্রয়সহ সকল ক্ষেত্রে রোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করে আসছে।

এছাড়া পথ্য বাণিজ্য সিন্ডিকেট সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে রোগীদের বিনামূল্যে সরকার কর্তৃক সরবরাহ করা ওষুধ নেওয়া থেকে পথভ্রষ্ট করে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের ওষধ ক্রয় করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কমিশনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফার্মেসি ওষুধের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করে থাকে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!