‘খুনি’ ভোলাকে সঙ্গে নিয়ে কর্ণফুলীর তীরে দখলবাণিজ্য বাস্তহারা জসিমের

কর্ণফুলীর তীরে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে খুনি ভোলা ও রোহিঙ্গা জসিম। একের পর এক এই দখলদারদের পেটে যাচ্ছে সরকারি শত শত একর জায়গা। এখন তাঁদের চোখ পড়েছে কর্ণফুলী সেতুর পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়ও। যে জায়গায় রয়েছে স্থাপনাসহ ব্যাংক ঋণ।

অভিযোগ রয়েছে, ভোলা ও জসিম সিন্ডিকেট এখানকার প্রায় ১৫ একর জায়গা দখলে মরিয়া। এখানে দলবল নিয়ে মহড়াও দিচ্ছে তারা। জায়গার প্রকৃত মালিকরাও সক্রিয়। জায়গাটি সিএমপির বাকলিয়া থানা এলাকায়। দখল সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠায় যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্ণফুলী তীরের সরকারি জায়গা দখল-বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন বাস্তুহারা জসিম উদ্দিন প্রকাশ রোহিঙ্গা জসিম। তিনি গত কয়েক বছরে গিলে খেয়েছেন শত শত একর সরকারি জায়গা। এসব জায়গা বিক্রি করে দিনমজুর থেকে হঠাৎ বনে গেছেন কোটিপতি। দখলবাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে কিনি গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী।

আরও পড়ুন: ‘নেতার কাণ্ড’—সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সরকারি জায়গা দখল, বাঁধা দিলেই হুমকি-ধমকি

ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্নস্থানে জসিম গড়েছেন আলীশান বাড়ি, আছে বিলাসবহুল গাড়িও। আলোচিত মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে আসলে তাঁর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে আতঙ্ক ছড়ানো শুরু করেছেন জসিম।

জানা গেছে, ২০০০ সালে ভাগ্যোন্নয়নে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর বস্তি থেকে রোহিঙ্গা জসিম উদ্দিন নগরের ফিশারিঘাট এলাকায় আসেন। মাছের বোটে কুলি ও বোট মেরামতের কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু তাঁর। ২০০৫ সালে শামসুল আলম তালুকদারের হাত ধরে বাকলিয়া বাস্তুহারা বস্তিতে আসেন। গুরুর আশীর্বাদে ২০০৬ সালে সমিতির সভাপতিও হয়ে যান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রোহিঙ্গা জসিমকে।

বাস্তুহারা রাজ্যের সম্রাট বনে যান তিনি। সরকারি খাস জায়গা বিক্রি করে ‘বাস্তুহারা জসিম’ অঢেল সম্পদের মালিক হন। অবৈধ জায়গা বিক্রি করে কিনেছেন বৈধ জায়গা। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান দালান। ফিরিঙ্গিবাজারে চার গণ্ডা ভূমির উপর বানিয়েছেন পাঁচতলা দালান। দিনমজুর থেকে কোটিপতি জসিমের জীবন যেন রূপকথার গল্প।

বস্তিবাসীর কাছে তিনি বার্মাইয়া জসিম, বাস্তুহারা জসিম ও ইয়াবা জসিম নামে পরিচিত। অপরাধ সাম্রাজ্য রক্ষায় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, কথিত সাংবাদিকদের দেন মাসোহারাসহ নানা উপঢৌকন।

বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে কলেজের পথ ধরে বাস্তুহারা বস্তিতে ঢুকতেই রাস্তার ধারে চোখে পড়ে সারি সারি ঘরবাড়ি। রয়েছে পাকা দালানও। এসব রক্ষায় গড়েছেন মসজিদ-মন্দির। তার কব্জায় মার্কেট, কলোনি, ঘর, দোকান, পুকুর খামার-বাড়িসহ অন্তত অর্ধশত কানি জায়গা রয়েছে।

এসব বস্তিতে রোহিঙ্গাদের এনে আশ্রয়ও দেন জসিম। নদীপথে চোরাই পণ্য এনে মজুদ করেন বস্তিতে। এছাড়া বস্তিতে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, মাদক চোরা চালানসহ অপরাধীদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন।

আরও পড়ুন: ‘বয়সের ছাড়’—চট্টগ্রামে অপরাধের মাঠে সমানে খেলছে শিশু

বাকলিয়া বাস্তুহারা বস্তির বিশাল সাম্রাজ্যের ‘রাজা’ তিনি। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন জসিম। নির্বাচনি সহিংসতায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাস্তুহারা বস্তি হাতছাড়া হয় তাঁর। জসিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, জসিম অনেকের কাছ থেকে জায়গা দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর বাহিনীকে চাঁদা ছাড়া কেউ ব্যবসা করতে পারে না৷

দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর আলোচিত মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ভোলা জেল থেকে বের হলে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে সখ্যতা। বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কর্ণফুলী তীরসহ বাকলিয়ার আশপাশে দখল ও নিয়ন্ত্রণে তার বাহিনী আবারো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নতুন করে শুরু করেছে দখল ও চাঁদাবাজি

এসব কুকর্মে জসিমের সহযোগী হয়েছে খুনি ভোলা। জসিম ও ভোলা সিন্ডিকেট এখন কর্ণফুলীকে গিলে খেতে বেপরোয়া। এ বিষয়ে জানতে জসিমের মোবাইলে একাধিক ফোন করেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

যোগাযোগ করা হলে বাকলিয়া থানার ওসি রাশেদুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বার্মাইয়া জসিমের কথা গত কয়েকদিন ধরে শুনছি। এখন কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ বা জমি দখলের সুযোগ নেই। জসিম ও ভোলা মিলে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা করে আমরা তা কঠোরভাবে দমন করব। এক্ষেত্রে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!