কারাবন্দী কিশোর গ্যাং লিডার টিনু কাউন্সিলর—ইসির শঙ্কাপ্রকাশ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়ে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

দুবছর ধরে জেলে থাকা নুর মোস্তফা টিনু গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক হন কথিত যুবলীগ নেতা কিশোর গ্যাং লিডার ও চকবাজারের ত্রাস নুর মোস্তাফা টিনু।

আরও পড়ুন: চকবাজারের ‘অস্ত্রবাজ’ টিটুর হঠাৎ ‘সন্ত্রাসী’ টিনু হওয়ার গল্প

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত কিশার গ্যাং নেতা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। টিনুর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের দুই ঐহিত্যবাহী কলেজ চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে মারামারি ও ভাংচুরসহ অস্ত্রবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন ব্যক্তি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়াকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করলেন খোদ জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন জটিল অসুখে আক্রান্ত। মেডিকেল বোর্ড গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

রোববার (১০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ইসি মাহবুব বলেন, ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগরের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েও একজন প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। স্বভাবতই ওই নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। আমার মতে, এতে নির্বাচনে একটা নতুন ধারা সূচিত হলো। নবনির্বাচিত কাউন্সিলর অবশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিক মামলায় দুই বছরের অধিককাল যাবত জেলে রয়েছেন। এই উপনির্বাচনের ফলাফল নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ বলা হলেও ইতিবাচকভাবে বলা যায়, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা এখন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং জনসমর্থন না থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন!

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিভিন্নজনের তর্ক-বিতর্ক এখন তুঙ্গে। গত ৫০ বছরে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এটা বাধ্যতামূলক হলেও সব ক্ষমতাসীন সরকার এটা লঙ্ঘন করেছে। সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা থাকলে এই আইন করা অনস্বীকার্য। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সব দলের সমঝোতা ছাড়া এমন আইন করা অসম্ভব। তবে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। আইন প্রণয়ন নির্বাচনের অন্যতম বা প্রধান সোপান হলেও অবশ্যই তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সমঝোতা না হলে দেশব্যাপী অরাজকতা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন: জামানত হারিয়েও গ্যাং লিডার থেকে কাউন্সিলর টিনু—টিআইবির ‘সংশয়’, ইভিএম নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

মাহবুব তালুকদার বলেন, আমাদের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত ছিল গণতন্ত্র। সংবিধানের চারটি মূলনীতিতে গণতন্ত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও আমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়ালের মতো গণতন্ত্রকে খুঁজে ফিরি, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? একজন ভোটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি এই আকাঙ্ক্ষাটুকু পূরণ করতে পারবে না?

সিএম/এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!