চট্টগ্রামে সয়াবিন তেল কিনতে নতুন টোপ, ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ীরা

দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরও খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট এখনো চলছে। আর এ সংকটের ফায়দা লুটছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা খুচরা দোকানিদের বাধ্য করছে তেলের সঙ্গে তাদের কোম্পানির অন্যান্য ভোগপণ্য কিনতে। কোম্পানির এসব পণ্যের অর্ডার না করলে তারা খুচরা দোকানিদের সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না।

মঙ্গলবার (১৬ মে) নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, ২নং গেইট, রাহাত্তারপুল, মুরাদপুরসহ আরো কয়েকটি খুচরা বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানেই নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ সয়াবিন তেল। কিছু দোকানে অল্প পরিমাণ সয়াবিন তেলের দেখা মিললেও তা কেবল আধা লিটার বা ১ লিটার। গুটিকয়েক দোকানে সর্বোচ্চ ৩ লিটারের বোতলেই সীমাবদ্ধ ছিল। বেশিরভাগ দোকানেই ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের কোনো বোতল দেখা যায়নি।

চকবাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। আমরা সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্য কোম্পানিগুলোর ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে দোকানে বিক্রির জন্য নিই। কিন্তু এখন তাদের কাছ থেকে সয়াবিন তেল পেতে নানা প্রতিবান্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। পুষ্টি, রুপচাঁদা বা ফ্রেশ সয়াবিন তেল নিতে গেলে তাদের কোম্পানির অন্যান্য পণ্যও নিতে হয়। তাই চাহিদা থাকলেও বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সয়াবিন তেল দোকানে তুলতে পারছি না।

আরও পড়ুন: অর্থ পাচারকারীরা পৃথিবীর কোথাও শান্তিতে থাকতে পারবে না : হাইকোর্ট

রাহাত্তারপুল এলাকার মুদি ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন জানান, মাঝে মাঝে কয়েকটা সয়াবিন তেলের কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা আসেন। পুষ্টি সয়াবিন তেল নিতে গেলে সঙ্গে পুষ্টি চা পাতা আর পুষ্টি সরিষার তেলও নিতে হয়। ফ্রেশ সয়াবিন তেল নিতে হলে ফ্রেশ দুধ পাউডারও অর্ডার করতে হয়। রুপচাঁদা তেলের সঙ্গে তাদের চিনিগুড়া চাল অর্ডার করতে বাধ্য করে, না করলে সয়াবিন তেল দেয় না। অনেক সময় তো ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে দোকানিদের তর্কাতর্কিও লেগে যায় সয়াবিন তেল পেতে। তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানে পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল রাখতে পারি না।

গত ৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বৈঠকের করে। এর পর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়। তারপরও নিত্যদিনের রান্নার জন্য দোকান থেকে সয়াবিন তেল পেতে বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, বাজার করতে এসে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে অনেক দোকান ঘুরে এক দোকানে পেয়েছি। বাড়তি দাম দিয়েও তেলের জন্য দোকানে দোকানে দৌড়াদৌড়ি করতে হওয়াটা দুঃখজনক।

আরও পড়ুন: ১৫২ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, হালিশহরে দোকান সিলগালা

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দোকানিদের সয়াবিন তেলের পাশাপাশি একই কোম্পানির অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করাটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। আমাদের কাছে যদি এ ধরনের অভিযোগ কেউ করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিব।

তিনি বলেন, দোকানিরা হয়ত মনে করে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে কোম্পানিগুলো তাদের কাছে আর পণ্য দিবে না। তাই হয়তো তারা আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় না। অভিযোগ জানালে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত আমাদের পদক্ষেপ নিব। হয়ত আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন আমদানি করা তেল বাজারে আসবে। এটি সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। তবে সব সঠিকভাবে বাজারে আসার জন্য বাড়তি মজুদসহ অন্যান্য অসাধু উপায় যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!