চট্টগ্রামে মাকে খুন করতে গিয়ে ধরা পড়া ২ ছেলেকে যেতে হলো কারাগারে

সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মার্স করপোরেশনসহ বৃদ্ধাশ্রম, চিকিৎসালয় ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধ্যানাগারের নির্মাতা সুজিত কুমার বড়ুয়া মারা যান ২০২৩ সালে। তার রেখে যাওয়া সম্পদের মালিকানা পান স্ত্রী মিনু রাণী বড়ুয়া। কিন্তু সেসব সম্পত্তি আর নিজেদের করে রাখতে চান না তাদের তিন সন্তান। সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দিতে বলেন মাকে। এতে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় মা মিনুকে কয়েকবার খুন করার চেষ্টা করেন সন্তানেরা। সন্তানদের সঙ্গে যুক্ত হন মামাও। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিন ছেলে, পুত্রবধূসহ ভাইয়ের নামে আদালতে মামলা করেন মিনু। সেই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

রোববার (৩১ মার্চ) সেই মামলায় জামিন চাইতে যান দুছেলের। চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।

কারাগারে পাঠানোরা হলেন— সুমন বড়ুয়া (৪২) ও অনুপম বড়ুয়া (৪০)। তারা রাউজান উপজেলার গোহিরা অংকুর ঘোনা এলাকার বড়ুয়াপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। বর্তমানে নগরের লালখানবাজার হাই লেভেল সড়কে বড়ুয়া বাড়িতে থাকেন।

আরও পড়ুন : মাকে খুন করেও অনুতপ্ত নয় সাবেক মেয়রপুত্র ‘ধূর্ত’ মাঈনুল

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুজিত কুমার বড়ুয়া নগরের লালখানবাজারে স্ত্রী মিনু রাণী বড়ুয়ার নামে ছয়তলা ভবনসহ বিভিন্ন সম্পদ রেখে যান। এছাড়া রাউজানে শু-মিনু কমপ্লেক্স নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম, চিকিৎসালয় ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য ধ্যানাগার নির্মাণ শুরু করেছিলেন। স্বামীর জীবদ্দশায় অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করছিলেন মিনু রাণী। অন্যদিকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান দেখভাল করছিলেন মিনুর ভাই সমুদত্ত বড়ুয়া (৫০)।

এদিকে মাদকাসক্ত বড় ছেলে সুমন বড়ুয়া বাবার মৃত্যুর পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন। বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দিতে বলেন মাকে। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পুত্রবধূ শেলী বড়ুয়াও। এনিয়ে মাকে নির্যাতনও করেন সুমন ও শেলী।

এসব বিষয় প্রবাসী ছেলে মিল্টন বড়ুয়াকে জানান মিনু। তিনি ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন এবং ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দিতে বলেন মাকে। পরে ১ অক্টোবর মিল্টন, সুমন ও শেলী মিলে একটি রুমে আটকে রেখে মিনুকে গলা টিপে ধরেন। এসময় মিনুর ভাই সমুদত্ত বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে নেন। পরে মিল্টন আবার বিদেশে ফিরে যান।

২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বামীর স্মরণে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে রাউজানের গ্রামের বাড়ি যান মিনু। সেখানে উপস্থিত হন সুমন, শেলী, মেজ ছেলে অনুপম ও সমুদত্ত। অনুষ্ঠান শেষে সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে ফের মিনুর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন তারা। এবার ছেলে ও ছেলে বউয়ের সঙ্গে যোগ দেন ভাই সমুদত্ত। এসময় সুমন ও শেলী ফের মিনুকে গলা টিপে ধরেন এবং অনুপম মায়ের দিকে বটি ছুঁড়ে মারেন। এরপর তারা আলমারি ভেঙে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে শহরে চলে যান।

পরে এসব ঘটনায় ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন ছেলে, পুত্রবধূ, ভাইসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন মিনু। ওইদিন আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে দুআসামি সুমন ও অনুপম গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের শর্তে অন্তবর্তীকালীন জামিন নেন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!