মাকে খুন করেও অনুতপ্ত নয় সাবেক মেয়রপুত্র ‘ধূর্ত’ মাঈনুল

ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অবাধ্য ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন মাঈনুদ্দিন মো. মাঈনুল (২৯)। যেকারণে পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল। এমন উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে বাবা জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না।

মাদকাসক্ত মাঈনুল সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিজ গর্ভধারিনী মা জেসমিন আক্তারকে গুলি করে খুন করেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় র‌্যাবের চাঁদগাও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

মাকে হত্যা করার পরও অনুশোচনার চিহ্ন দেখা যায়নি মাঈনুলের মধ্যে, জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।

তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পটিয়ার সমজারপাড়া এলাকায় নিজ বসতঘরে মা জেসমিন আক্তারকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে গুরুতর আহত করে মাঈনুল পালিয়ে যায়। এর আগে বাকবিতণ্ডার মধ্যে তার বোন শায়লা শারমিন নিপার দিকে তাক করে সে এক রাউন্ড গুলি করে। কিন্তু মিস ফায়ারের কারণে তার গায়ে লাগেনি। এরপর মায়ের দিকে তাক করে গুলি করলে চোখের নিচ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই মা জেসমিন লুটিয়ে পড়লে তার মেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খুনের ঘটনায় নিহতের মেয়ে শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন: শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে গুলি করে খুন করল মাকে

এরপর র‌্যাব গোয়েন্দ তৎপরতা বৃদ্ধি করে। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় ঢাকাগামী বাস থেকে আসামি মাঈনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সে জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর সে দোহাজারী এলাকায় বেশ কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তির কাছে থাকার জায়গা চায়। কিন্তু কেউ তাকে জায়গা না দেওয়ায় এক বড় ভাইয়ের অফিসে রাতযাপন করে। এর আগে তার মাকে গুলি করা সেই জার্মান মেইড অস্ত্রটি সাতকানিয়া থানাধীন রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘরে লুকিয়ে রাখে। এ অস্ত্র আমরা উদ্ধার করি।

অপরাধী মাঈনুল খুবই চালাক প্রকৃতির। হত্যাকাণ্ডের পর সে ব্যবহারের মোবাইল ফোনটি একটি পুকুরে ফেলে দেয়ে। তাছাড়া ঢাকাগামী বাসে টিকিট ছাড়া কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে কন্ট্রাকে উঠে। কারণ টিকিট কাটলে ট্র্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া সে একজন মাদকাসক্ত। ইয়াবা ও গাঁজা সেবনের কথা সে জানিয়েছে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাসহ মোট চরটি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। তবে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর৷ আগে গত ১৩ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টার মারা যান। পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের মাদকাসক্ত সন্তান মাঈনুলের ধারণা, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও ব্যাংক ব্যালেন্স তার মা-বোন বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমাবেন। এ কারণে সে এমন নৃশংস কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, এর আগে মাঈনুল তার বোন ও আপন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। সেই দেশে দুবছর অবস্থানকালে সেই দেশের আইন লঙ্ঘন করায় তাকে আবার দেশে ফিরতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, শামসুল আলমের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মৃত্যুকালে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। শামসুল আলমের ছোট ছেলে এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ঈদুল ফিতরের সময় তারা দেশে আসেন। শামসুল আলমের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে ও মেয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

আরএস/এসআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!