চট্টগ্রামে প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ের স্পটেই নেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স

প্রতিদিন প্রাণ বাঁচানোর লড়াই চলে এখানে। অসংখ্য অসুস্থ মানুষ প্রতিদিন এখানে আসেন। এর মধ্যে রয়েছে মুমূর্ষু রোগীও। যাদের জন্য তখন প্রতিটি সেকেন্ডই ভীষণ মূল্যবান। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা সেই রোগীদেরও যানজটে পড়ে ভোগ করতে অসহ্য যন্ত্রণা।

বলছিলাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে ‘কেবি ফজলুল কাদের রোডে’র সড়কের কথা। নগরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিতেই নেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স। তাই যানজট এখানে নিত্যসঙ্গী। আর এ যানজটে পড়ে প্রতিনিয়ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের।

২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকেও কেবি ফজলুল কাদের রোডে দেখা গেছে যানজটের চিত্র। সাধারণ গাড়ির পাশাপাশি যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে অ্যাম্বুলেন্সকেও।

স্থানীয়রা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে নেই ট্রাফিক বক্স। এ কারণে সড়কের এক পাশ দখল করে থাকে প্রাইভেট গাড়ি, অন্য পাশ দখলে থাকে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের। তারওপর রয়েছে ভাসমান হকার। এসব কারণে ছোট হয়ে গেছে রাস্তাটি। এতে বাড়ছে যানজট। যানজটে পড়ে নাকাল হতে হয় জনসাধারণকে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন মুমূর্ষু রোগীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, চকবাজার থেকে প্রর্বতক মোড় পর্যন্ত রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার (রোগ নিরুপণ কেন্দ্র)। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগেরই নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে রোগী ও স্বজনরাও ব্যক্তিগত গাড়ি রাখে রাস্তা দখল করে। এতে ছোট হয়ে গেছে ব্যস্ততম এই সড়কটি।

প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা কয়েকজন জানান, প্রর্বতক মোড়ে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। রয়েছে চকবাজারেও। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনের সড়কেই নেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স। ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কারণেই যত্রতত্র চলে পার্কিং। এতে প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে যানজট।

প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাওয়া-আসা করেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, আমি সকাল-সন্ধ্যা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। প্রায়সময় সড়কটিতে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

অটোরিকশা চালক মো. মামুন বলেন, যাত্রী নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এই সড়কে চলাচল করতে হয়৷ যানজট তো এখানে প্রতিদিনের ঘটনা। এখানে যে যার মতো রাস্তা দখল করে পার্কিং করে। আবার অনেকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ইউটার্নও করে।

তিনি আফসোস করে বলেন, এই সড়ক দিয়ে অসংখ্যবার যাওয়া-আসা করেছি। কিন্তু কোনোদিন কোনো ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখিনি।

আরও পড়ুন: বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে প্রাণহানি—২ পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এই সড়ক ট্রাফিক পুলিশরা মনে হয় চেনে না। কারণ যত যানজট থাকুক না কেন তাদের কখনও দেখা পাওয়া যায় না। এখানে যদি ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি কমে যেত। এর সবচেয়ে বেশি সুফল পেত মুমূর্ষু রোগীরা।

সমাজকর্মী কায়সার আলী চৌধুরী বলেন, নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় চকবাজার ও প্রর্বতক। এই দুমোড়ের মাঝে অবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অথচ এখানে ট্রাফিক বক্স না থাকায় যানজট লেগেই থাকে। সিএমপি কমিশনারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, যত দ্রুত সম্ভব এখানে যাতে একটি ট্রাফিক্স বক্স স্থাপন করে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশ থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এটি করা গেলে একদিকে যেমন নগরবাসীর ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নগরের কোথাও যাতে যানজট না থাকে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ সর্বদা তৎপর। নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতেও বিশেষ নজরদারি আছে ট্রাফিক পুলিশের।

তিনি বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট থাকবে চকবাজার আর প্রবর্তক মোড় এলাকায়। এর মাঝখানের সড়কে থাকবে কনস্টেবল।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!