চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা দিদারের বিরুদ্ধে দখলকাণ্ডের অভিযোগ, রক্তাক্ত নারী

নগরে উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে শাহ গরিবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটিতে জায়গা দখলের চেষ্টায় নারীর ওপর সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ উঠেছে খোদ মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে! যিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি, চট্টগ্রাম আবাহনীর উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ব্লাইন্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।

সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মিনুয়ারা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে মিনুয়ারা বেগম বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে নগরের গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছি। গত শনিবার (৮ জুলাই) রাতে মশা নিধনের নামে আমাদের ঘেরা দেওয়া দুকাঠা জায়গায় শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটি সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দিদারুল আলম চৌধুরী, সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। পরিষ্কারের নামে তারা সেখানে জোরপূর্বক একটি কনটেইনার বসান। মূলত সোসাইটির অফিস করার জন্য তারা পাঁয়তারা শুরু করেছেন। এমন অবৈধ কাজে বাধা দিলে আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় তারা। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ আসে। এরপর অভিযুক্তরা পুলিশের সামনেও আবার হামলা শুরু করে। এসময় আমি ও আমার মা রক্তাক্ত জখম হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের জায়গায় বিল্ডিং করতে চাইলে দিদারুল আলম চৌধুরী তিনটি ফ্ল্যাট দাবি করেন। অন্যথায় জায়গা দিতে হবে বলে জানান। তাঁর অন্যায় দাবির প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর দলবল নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে। এছাড়া শনিবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত থেমে থেমে ঘরের টিনের চালে পাথর নিক্ষেপ এবং নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি হাউজিংয়ের ভেতর হাঁটাচলা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করে পদ হারালেন সেই আওয়ামী লীগ নেতা

আওয়ামী লীগ

মিনুয়ারা বেগমের ভাই জাহেদ হাসান বলেন, আমাদের মোট ১০ গণ্ডা সম্পত্তির মধ্যে ২ কাঠা জমি নিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে নালিশি মামলা হয়। সেই মামলায় ২০১২ সালে আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় পাই। রায়ে উল্লেখ রয়েছে, নালিশি জমি থেকে বাদীকে বেদখল বা নালিশি জমিতে বিবাদী ও তার দলীয় লোকজন অনুপ্রবেশ করা বা জমির রূপ পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকার জন্য চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু তারা উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে গত শনিবার রাতে দলবল নিয়ে আমাদের জায়গা দখলের জন্য আসেন। এর আগে গত ২৪ জুন হত্যার হুমকি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় জিডি করি। আজ (১০ জুলাই) পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ভুয়া দাবি করে লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এটি অন্য জায়গার। সোসাইটিতে ১৪৬ সদস্যের মধ্যে ১৪৫ জন এক রয়েছে। শুধু সেই ছেলেটি বহিরাগত ছেলে নিয়ে এসে এখানে সমস্যা সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, সোসাইটির জায়গার দলিলে যদি মালিকানা গণ্ডায় থাকে তা কাঠায় ভোগ করতে পারে। কারণ রাস্তা, ড্রেনসহ নানা কাজে এসব জায়গা ব্যবহৃত হয়। আগে সোসাইটির জন্য দুকাঠা জমি দিলেও জাহেদ হাসান নানাজনের কুপরামর্শে মামলা-মোকদ্দমা করেছে। আমাদেরও সন্তান আছে। সে এতিম ছেলে বলে তাকে আমরা অনেক সুযোগ দিয়েছি। সোসাইটির রাস্তা তৈরির জন্য তারা কোনো জায়গা ও টাকা দেয়নি। তাই তাদের হাঁটাচলা এখানে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ল অ্যান্ড ফোর্সিং অথোরিটিকে এই বিষয়ে জানিয়ে দেব।

নারীদের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমার আমলনামা ঘেঁটেও এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিনুয়ারা বেগমের বোন নিলু পারভীন, মুনমুন ফাতেমা (হামলার শিকার), ফেরদৌস মুক্তা, দিলোয়ারা বেগম, মিনুয়ারা বেগম ও ভাই জাহেদ হাসান। তারা ২০৭/৬৩২ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের মরহুম দুদু মিয়ার সন্তান।

এদিকে ওইদিনের হামলার বেশ কিছু ভিডিও আলোকিত চট্টগ্রামের প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই গেটে হামলা চালায় বেশ কয়েকজন যুবক। এছাড়া সেই জায়গায় একটি সাদা কনটেইনারও বসানো হয়েছে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!