‘পছন্দের’ টিনুকে আসামি করায় ক্ষুব্ধ ওসি, পাল্টা মামলায় ছাত্রলীগ সভাপতিসহ আসামি ১২

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায় চকবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী টিনুসহ তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় টিনুর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর সে মামলা প্রথমে নেননি। টিনুর সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তাকে বাদ দিয়েই এজাহার দিতে বলেন তিনি বাদি পক্ষকে। ওই সময় ওসির সাফ কথা, টিনুর বিরুদ্ধে মামলা দিলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিমের বিরুদ্ধেও এ ঘটনায় মামলা হবে।

শেষমেশ ছাত্রলীগের অনড় অবস্থানের মুখে টিনুকে প্রধান আসামি করেই মামলা নেয় চকবাজার থানা পুলিশ। কিন্তু ওসির কথামতো আসামির তালিকা থেকে টিনুকে বাদ না দেওয়ায় পাল্টা আরেকটি মামলায় কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধেই মামলা নিলেন ওসি। শুধু তাই নয়, হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদিকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় ‘পছন্দের’ টিনুকে আসামি করায় ‘ক্ষুব্ধ’ ওসি হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা নিয়েছেন।

এই অভিযোগ তুলেছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম।

জানা গেছে, গত ১৬ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারীদের উপর চকবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর মোস্তফা টিনুসহ তার অনুসারীরা হামলা চালায়। এ ঘটনায় সাত জন আহত হয়। বিকেলে এ ঘটনায় টিনুসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে গেলে বেঁকে বসের চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর। তাঁর কথা, টিনুকে এই মামলায় আসামি করা যাবে না। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানায়। তাদের চাপের মুখে টিনুর বিরুদ্ধে মামলা নেন ওসি। কিন্তু পরক্ষণেই ‘ব্যালেন্স’ করতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিমকে আসামি করে হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও ওসি মামলা নেন।

রাজনৈতিক ‘ব্যালেন্স’ করতে দায়ের হওয়া পাল্টা এই মামলায় মাহমুদুল করিমের পাশাপাশি আসামি করা হয় হামলার ঘটনায় টিনুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদি আবদুল্লাহ আল সাইমুন (২৩), জাহিদ হাসান সাইমন (২৮), সাফায়েত হোসেন রাজু (২৩), মোস্তফা আমান (২৩), কায়েস মাহমুদ (২৪), শেফায়ুতুল করীম (১৯), কাইয়ুম (১৮), ওয়াহিদুর রহমান সুজন (২৫), মেহরাজ সিদ্দিকী পাভেল (২০), আবু তোরাফ (২২) ও তৌহিদুল করিম ইমনকে (২৩)।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেলে মামলাটি দায়ের করেন টিনুর অনুসারী মো. আনসারুল করিম।

এ বিষয়ে মাহমুদুল করিম বলেন, বুধবার কলেজে হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করতে গেলে টিনুকে আসামি করতে ওসি নিষেধ করেন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানালে ওসি এ সময় টিনুকে মামলার আসামি করলে আমাকেও মামলার আসামি হতে হবে বলে হুমকি দেন। ঠিকই টিনুর বিরুদ্ধে মামলার পরপরই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এজাহার রেডি করে ওসি মামলা দেন। চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী টিনুকে ওসি কেন শেল্টার দিচ্ছে তা খুঁজে বের করা উচিত।

মাহমুদুল করিমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর বলেন, আমার এখানে কোনো স্বার্থ নেই। কোন দরকারে আমি মামলা করতে চাপ দিব? এগুলো রাজনৈতিক মামলা। কলেজের ঘটনায় দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে। আমরা তদন্ত করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও। এ ঘটনায় নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছেন- ‘সিএমপি-পুলিশ কমিশনারকে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে চিনি। কিন্তু তার অধীনস্থ থানার পুলিশ বাহিনী যে- ছিঁচকে চোর, টোকাই, সন্ত্রাসীদের ভয় পান; এটা এতদিন জানতাম না। অথবা তিনি নিজেও জানে না- অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করতে এসেছেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার পর খোদ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধেই মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ। ধিক্কার!’

আলোকিত প্রতিবেদক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!