স্মার্ট পোর্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, ২০৩০ সালে নয়া চমক

চলতি বছর ৩ মিলিয়ন ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা কাটিয়ে ২০২৪ সালে স্মার্ট পোর্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্লাবেও যুক্ত হবে। এছাড়া বে-টার্মিনালে যুক্ত হচ্ছে নতুন টার্মিনাল।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো. সোহায়েল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। আশা করি শেষ সপ্তাহে প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে, যা গত বছরের প্রায় সমান। বছরের একই সময়ে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে বন্দর। যা বছর শেষে প্রায় ১২ কোটি মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। পূর্বের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড অতিক্রম করবে এ বছরের কার্যক্রম।

২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্লাবে যুক্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনাল মিলে বেশ ভালো কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম হবো। টার্গেট ২০৪১ হলেও আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্লাবে যুক্ত হতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন প্রকল্প পরিবেশবান্ধব, কমছে কার্বন নিঃসরণ

বন্দর চেয়ারম্যান সোহায়েল বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন সংকটের ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাবে ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত মন্থর। এ অবস্থায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইনে বাধার (সাপ্লাই চেইন ডিসরূপশন) ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থরতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি । বরং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বে-টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনাল হিসেবে গ্যাস ও অয়েল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বে-টার্মিনালে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল ছাড়াও এবার নতুন করে লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নামে আরেকটি টার্মিনাল যুক্ত হচ্ছে। এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। আগামী বছরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।

সৌদি আরবের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় গত ৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআই’র সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এতে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী ৪০ জন বাণিজ্য প্রতিনিধিসহ দুটি চার্টার্ড বিমানে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তারা।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বিষয়ে তিনি বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে দিকে নির্মাণ শুরু করা হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রাধিকার প্রকল্প বে-টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ ২০২৪-এর মাঝামাঝি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যৌথ উদ্যোগে উক্ত টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্টস) ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দাখিল করেছে। বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল ১ ও ২ নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য পিএসএ সিংগাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে আগামী বছর চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আমরা আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস প্রস্তাব দিয়েছে যা বর্তমানে পিপিপি প্রকল্প হিসেবে প্রক্রিয়াধীন। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ডেনমার্ক যৌথ প্ল্যাটফর্ম সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজও আগামী বছর শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!