‘সিডিএর খামখেয়ালি’ বায়েজিদে হেলে পড়ল ভবন, তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

চট্টগ্রামে হঠাৎ হেলে পড়েছে একটি ৪ তলা ভবন। এ ঘটনায় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বায়েজিদ থানার রৌফাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকার খোরশেদ ম্যানশনে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। তারা ভবনে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, খোরশেদ ম্যানশনের ৪ তলার ভবনে ৮ পরিবার বসবাস করে। আজ সন্ধ্যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোটা ভবন হঠাৎ নড়ে ওঠে। এসময় আতঙ্কিত হয়ে বাসিন্দারা ছোটাছুটি শুরু করে।

এদিকে ভবন মালিক ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে মাটি উত্তোলনের কারণে হয়ত ভবনটি হেলে পড়েছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে হঠাৎ হেলে পড়ল চারতলা বিল্ডিং

এ বিষয়ে ভবন মালিক খোরশেদ অভিযোগ করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আজকে ৩-৪ দিন ধরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ হিসেবে খালে মাটি উত্তোলন করছে । সেজন্য বিল্ডিংয়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় উত্তরপাশে হেলে পড়েছে। সিডিএ অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ তলা অনুমোদনে ৪ তলা পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বায়েজিদ সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার কামরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হেলে পড়া ভবনের পাশের খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে মাটি উত্তোলনের কাজ চলছে। যার কারণে এই ভবনের নিচের থেকে মাটি সরে গিয়ে দুটি পিলার ভেঙে পড়ায় ভবনটি উত্তর দিকে হেলে পড়েছে।

তিনি বলেন, ভবনটির পাশাপাশি আরও দুটি ভবন আছে। একটি ৫ তলা ও আরেকটি ৩ তলার। এসব ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে৷ এছাড়া ভবনটি হেলে পড়ার প্রকৃত কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বুঝা যাবে।

৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি

৪ তলা ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কমিটির আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদিউর রহিম জাদিদ, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, চান্দগাও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেরদৌস আরা এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে।

এছাড়া ৪টি ভবন ঝুকিপূর্ণ বিবেচনায় সেগুলোর বাসিন্দাদেরও সরিয়ে আনা হয়েছে। মোট ১০০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন হতে উপপরিচালক স্থানীয় সরকারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সিএমপি, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিস ও পিডব্লিউডি’র প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি ভবনে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বসবাস না করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বাসিন্দাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এআইটি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!