শাহপরীর দ্বীপের দুঃখ ঘুচল না ১০ বছরেও, ৫ মৃত্যু—রক্তাক্ত ৫০০

দেশের ঐতিহাসিক জনপদ টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ। অর্ধলাখ মানুষের বসবাস এই দ্বীপে। টেকনাফ সদর থেকে দক্ষিণে ১৫ কিলোমিটার গেলে সাবরাং ইউনিয়নের হাররিয়াখালী গ্রাম। সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম শাহপরীর দ্বীপ।

২০১২ সালের ২২ জুলাই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এই দ্বীপের পশ্চিমপাড়া অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের এক কিলোমিটার অংশ বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তখন জোয়ারের ধাক্কায় শাহপরীর দ্বীপ-হারিয়াখালী সড়কের ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে যায়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছরেও এ সড়কের জোড়া লাগেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সড়কটি সংস্কারের কাজ খুবই ঢিমেতালে চলছে। সড়কটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সওজ বিভাগের কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে আড়াই বছরেও সড়ক সংস্কারের অর্ধেক কাজ শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন: গণমাধ্যমের নিউজে ছাড়া আর কোথাও নেই বিএনপি : আ জ ম নাছির

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষকে ৫ কিলোমিটার ভাঙা ও কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে টেকনাফ সদরে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ভাঙা সড়কে পা পিছলে ও নৌকা থেকে পড়ে গত ১০ বছরে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। আসন্ন বর্ষায় সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হবে। অথচ শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ সদরে যাতায়তের বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই।

শাহপরীর দ্বীপ বাঁচাও আন্দোলন সভাপতি ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ২০১৮ সালে ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার ভাঙা সড়কটি সংস্কারের জন্য সরকার ৫৪ কোটি ৮০ টাকা বরাদ্দ দেয়। কাজ পায় মেসার্স আল আমিন নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি কাজটি বিক্রি করে দেয় চট্টগ্রামের আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেকে এন্টারপ্রাইজকে। ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করলেও বাস্তবে ৬০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, সড়কে মাটি ভরাটের কাজে চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি। মাটির বদলে ফেলা হচ্ছে বালু। রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ার অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০-২৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে সওজ দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।

আরও পড়ুন: হাটহাজারীতে শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি শিক্ষক আবু তালেবের হ্যাটট্রিক

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বড় বড় গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। কাদায় মাখামাখি হয়ে হেঁটে দ্বীপে যাচ্ছেন মানুষজন। অনেকে কাঁধে করে বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের শেষ অংশে ভরা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির দুপাশে নেই সংযোগ সড়ক। লোকজন সেতুর নিচ দিয়ে ডিঙি নৌকায় খাল পার হচ্ছেন। খালের পানিতে তেলের ড্রাম জোড়া লাগিয়ে এর ওপর বাঁশের চাটাই বিছিয়ে বানানো হয়েছে ভাসমান সাঁকো। সাঁকোটির অবস্থাও নাজুক। সড়কের মধ্যভাগ খালি রেখে বালু ফেলা হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে খালি জায়গায় পানি জমে খালে পরিণত হয়। তখন সড়কের দুপাশে কাদার ওপর দিয়ে হেঁটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলতে হয়।

শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শাহপরীর দ্বীপের ৪৫ হাজার মানুষের তরিতরকারি, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যসহ পাঁচ শতাধিক দোকানপাটের মালামাল আনতে হয় টেকনাফ সদর থেকে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মালামাল আনতে হয় লোকজনের কাঁধে এবং কিছু অংশ নৌকায় করে। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী তানিন মাহমুদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ আছে। সড়কে মাটির কাজ শেষ হলে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হবে। খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর উভয় পাশে মাটি ভরাট কাজও শিগগিরই শেষ হবে।

আরও পড়ুন: মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারানো যাত্রীবাহী বাসে দুমড়েমুচড়ে গেল ২ দোকান

সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেকে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুস জব্বার চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে না।

সড়ক উন্নয়নকাজে বৃষ্টি প্রধান বাধা দাবি করে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আরেফিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!