দলের কর্মসূচিতে না থাকলেও বিধি ভেঙে লতিফের প্রচারণায়—মেয়র রেজাউলকে তলব

প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আগে ভোটের প্রচার চালানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সেই নিয়ম না মেনে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকা এক সাংসদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় মেয়রকে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এছাড়া এ ঘটনায় বৃহস্পতিবারের (৭ ডিসেম্বর) মধ্যে ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়েছে তাঁকে।

নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তৃতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ বেগম আঞ্জুমান আরা রোববার (৩ ডিসেম্বর) মেয়রকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তাঁর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না।

এদিকে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম ১১ সংসদীয় এলাকার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারে যান। আচরণবিধি না মেনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ লতিফকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান তিনি।

বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি মেয়র রেজাউল করিমকে চিঠির মাধ্যমে তলব করেছেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিধি অনুসারে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অথচ প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কর্মে নিয়োজিত থেকেও নির্বাচনের পূর্বে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত স্থানে একটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। চট্টগ্রাম-১১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম আব্দুল লতিফের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই কাজ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১৪ (১) এবং (২) বিধানের চরম লঙ্ঘন। এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে ৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। অথবা উপযুক্ত কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে শোকাবহ আগস্টে দলের ৫ কর্মসূচিতে ছিলেন না মেয়র রেজাউল

এর আগে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী চসিক ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন এমএ লতিফের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হয়রানিসহ বিগত ১৫ বছরের নানা খতিয়ান তুলে ধরে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে একটি চিঠি দেন। ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনাও হয়। এরপর চিঠিতে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে নেতাদের মতামত নিয়ে পরদিন সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে ওই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সময় এমএ লতিফের মনোনয়ন পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয় নগর আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করা মেয়র রেজাউল করিম নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে ছুটে যান দলের অনিয়মিত এক সাংসদের প্রচারণায়। ইতিমধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভে ফুসছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করে আওয়ামী লীগসহ ও এর অঙ্গ সংগঠন। কিন্তু সেসময় চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ ফেলে মেলা দেখতে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেও পর পর দুদিন সমাবেশ করেছে নগর আওয়ামী লীগ। সেই সময় দেশে থাকলেও সমাবেশে দেখা মেলেনি মেয়রের।

নগর আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে হওয়া অধিকাংশ দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না মেয়র রেজাউল করিম। এর আগে ২০২২ সালের বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি, ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, মুজিবনগর দিবস, ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ৬ দফা দিবস, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, শেখ হাসিনার কারাবরণ ও কারা মুক্তি দিবস, শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশ, ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ১৪ আগস্টের সভায় উপস্থিত ছিলেন না রেজাউল করিম চৌধুরী। এমনকি ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নেননি তিনি।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ রশিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা, ৭ নভেম্বর গণতন্ত্র হত্যা দিবসের আলোচনা সভা, ৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ইদ্রিস আলমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা, ৫ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ, ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নবম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় জেল হত্যা দিবসের স্মরণসভা অনুষ্ঠানের একটিতেও দেখা যায়নি মেয়রকে।

এছাড়া ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য চৌধুরী এন জি মাহমুদ কামালের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা এবং ১৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিনে নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায়ও যাননি মেয়র রেজাউল।

২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর ৩১ নম্বর আলকরন ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য তারেক সোলায়মান সেলিমের স্মরণসভায়ও উপস্থিত ছিলেন না রেজাউল করিম চৌধুরী। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মতো নেতারা ওই স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!