বদলে গেল তিনদিনের দৃশ্য—মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল লাখ লাখ লোক

করোনার বিধিনিষেধ ছিল না। তাই বাঁধভাঙা জোয়ারের মতোই লোক এসেছেন সীতাকুণ্ডে। উপোস থেকে তাদের অনেকেই গেছেন চন্দ্রনাথের চূড়ায়। দেবাদিদেব মহাদেবের মাথায় দুধ-ডাবের জল ঢেলে জানিয়েছেন নিজেদের মনোবাসনা। তৃপ্ত মনে সেই পুণ্যার্থীরাই ছাড়ছেন সীতাকুণ্ড।

শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে তিনদিন ধরে প্রায় ২০ লাখ লোকের পদচারণায় মুখর ছিল সীতাকুণ্ড। ২ মার্চ (বুধবার) শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী বিশাল এ আয়োজন। একদিন আগেও যেখানে লাখ লাখ লোক ছিল পরদিনই বদলে গেল সেই দৃশ্যপট। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল লাখ লাখ লোক!

প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকে সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলার প্রচলন হয়েছিল। যদিও এর সময়কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই মেলা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ফাল্গুনী চতুর্দশী তিথি ঘিরে আয়োজিত মেলায় প্রতিবছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ তীর্থযাত্রী আসে।

তৃপ্ত মনে পুণ্যার্থীরা ছাড়ছেন সীতাকুণ্ড – আলোকিত চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ‘অভিনব চুরি’, পালাল লাকসাম—নাঙ্গলকোটের ২ লোক

জানা যায়, ফাল্গুন মাসের চতুর্দশী তিথিকে বলা হয় শিবচতুর্দশী। এই তিথিতে ভক্তি সহকারে পূজা করলে শিবঠাকুর (মহাদেব) ভক্তের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। তাই এই তিথিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে মহাদেবের পূজা করতে ও একই সুযোগে মহাতীর্থভূমির মঠ-মন্দিরগুলো দর্শন করে পুণ্যলাভের আশায় এখানে ছুটে আসেন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সনাতনীরা।

প্রতিবছর শিবচতুর্দশী তিথির আগে-পরে অন্তত ১৫ দিন দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে সীতাকুণ্ড। এ সময় পুরো তীর্থভূমি সেজে ওঠে নতুন সাজে। সর্বত্র দেখা যায় উৎসবের আমেজ।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চন্দ্রনাথ ধাম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যও। প্রত্যেক সনাতন ধর্মাবলম্বী জীবনে একবার হলেও সীতাকুণ্ডে আসেন চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থ দর্শন করতে। ফলে সারাবছর এখানে বহু পুণ্যার্থীর আগমন হয়।

এবারও তিনদিন ধরে মেলা হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ মেলায় সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সীতাকুণ্ড পৌরসভা, ইপসা, চন্দ্রনাথ স্রাইন ও মেলা কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক টিম তীর্থযাত্রীদের সবসময় সহায়তা করেছেন। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দিয়েছে সেবা।

এদিকে শিবচতুর্দশী মেলা সমাপ্ত হলেও প্রতিবছরের মতো এবারো একই স্থানে আগামী ১৭-১৮ মার্চ দুদিনব্যাপী দোল পূর্ণিমা মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন: বিচারকের ঠোঁট ফাটিয়ে রক্ত ঝরাল ৫ লোক, ভেঙে দিল দাঁত

সীতাকুণ্ডে মহাতীর্থ শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরছেন পুণ্যার্থীরা – আলোকিত চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ৫শ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফাল্গুনী শিব চতুর্দশী তিথিতে দেবাধিদেব মহাদেবের পূজাকে ঘিরে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে শিবচতুর্দশী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার তিন দিনে এখানে ২০ লক্ষাধিক ভক্তের আগমন ঘটে। মেলার শেষ দিন গতকাল বুধবার পুণ্যার্থীদের অনেকে তাদের পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে ব্যাসকুণ্ডে পূণ্যস্নান ও শ্রাদ্ধ-তর্পন করেছেন।

মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শিবচতুর্দশী মেলার প্রতিটি দিন ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ঢল। উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে। সবার সহযোগিতায় তীর্থ যাত্রীরা নিরাপদে ফিরে যাওয়ায় আমরা আনন্দিত।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!