বিচারকের ঠোঁট ফাটিয়ে রক্ত ঝরাল ৫ লোক, ভেঙে দিল দাঁত

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা। বিচারক অলি উল্লাহ (চট্টগ্রাম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) নগরের জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ওয়েলফুডের সামনে স্ত্রীসহ হাঁটছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কারের (ঢাকা মেট্রো গ ১৫-৮৯৬৬) ধাক্কা। এ ঘটনায় গাড়ি চালকের কাছে কারণ জানতে চান আহত বিচারক। কারণ চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির চালক এসে তাঁর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান । পরে চালকের সঙ্গে যোগ দেন গাড়িতে থাকা আরও ৪ জন। একপর্যায়ে সবাই মিলে ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত ও মেরে রক্তাক্ত করেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। তবে একজন এখনও পলাতক রয়েছে।

এর আগে ঘটনার দিন (সোমবার) রাতে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে পাঁচলাইশ মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জয়নারায়ণপুরের মোখলেছুর রহমানের ছেলে রানা মর্তুজা (৪৫), ঢাকার বসুন্ধরা ডি-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৩০১ নম্বর বাসার বাসিন্দা শিশির মাহমুদ (৪০), রানা মর্তুজার দুই বোন ঢাকার বসুন্ধরা সি-ব্লকের বাসিন্দা মাসুকা সুলতানা (৪০) ও জিবান সুলতানা (২৮) এবং গাড়ির চালক ঝালকাঠির রাজাপুরের বাসিন্দা আবদুর রহিম (৩৮)।

এদের মধ্যে শিশির মাহমুদ ছাড়া বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: সেই বিচারককে আদালতে না বসার নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি

থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রধান আসামি রানা মর্তুজা বেলজিয়াম প্রবাসী। তিনি নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ওয়েল ফুডের সামনে বিচারক অলি উল্লাহ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে হেঁটে রাস্তা দিয়ে গোলপাহাড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে একটি সাদা প্রাইভেটকার বিচারক অলি উল্লাহকে ধাক্কা দেয়। তিনি এর প্রতিবাদ জানালে গাড়িতে থাকা পাঁচ যুবক তেড়ে আসেন। তারা এ সময় বিচারক অলি উল্লাহকে অশালীন কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে সবাই মিলে তাঁকে মারধর শুরু করে। মারধরের কারণে তাঁর দাঁতের অর্ধেক অংশ ভেঙে যায় এবং ঠোঁট ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।

মামলা এজাহারে বলা হয়, ওই গাড়িতে থাকা মাসুকা সুলতানা ও জিবান সুলতানা নামের দুজন বিচারক অলি উল্লাহর স্ত্রী ইফফাত মৃধা আরিফার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যার চেষ্টাও করে। অন্যদিকে ওই গাড়ির চালক আবদুর রহিম ম্যাজিস্ট্রেটের গলা চেপে ধরে তাঁকেও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে ঘটনার মূল হোতা রানা মর্তুজা নামের ওই তরুণ আরও লোকজনকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য মোবাইলে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আরও ৪-৫ জন এসে বিচারককে টেনেহিঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাঁর ওপর আরও এক দফা হামলা করা হয়।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালতের ৩ বিচারক করোনায় আক্রান্ত

খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জড়িত রানা মর্তুজাসহ তার দুই বোন এবং গাড়ির চালকসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে এ সময় শিশির মাহমুদ নামের আরেকজন পালিয়ে যান।

পরে বিচারকঅলি উল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

যোগাযোগ করা হলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিচারকের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!