চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ‘নিয়োগের’ দৌড়ে এগিয়ে বিএনপি-জামায়াত

তালিকায় জুনিয়র শিক্ষকও, পিছিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) নতুন উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের নাম প্রস্তাব নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। পাঠানো প্রস্তাবনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবনার প্রথমজন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত লোক হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

প্রস্তাব পাঠানো তিনজনের মধ্যে প্রথমজনের বিরুদ্ধে বিএনপির-জামায়াত সঙ্গে কানেকশনের অভিযোগ রয়েছে। বাকি দুজন প্রতিষ্ঠানের ‘জুনিয়র’ শিক্ষক।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রস্তাবনায় তিনজন নামের তালিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সিভাসুর নতুন উপচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের নাম প্রস্তাব করা হয়। তাঁরা হলেন, ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. নুরুল আবছার খান, এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম লুৎফুল আহসান ও জেনেটিক অ্যান্ড অ্যানিম্যাল ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক মিয়াজি।

গত ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য বিদায়ী উপচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ থাকা অবস্থায় এ প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

কিন্তু নাম প্রস্তাব হওয়া দ্বিতীয় দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক। একইসঙ্গে প্রথমজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে কর্মরত আছেন। যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপচার্য হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০০৬ সালের প্রকাশিত গেজেটের ১০ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস সংশ্লিষ্ট উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্যেষ্ঠ শিক্ষাবিদদের মধ্য থেকে একজনকে চার বছর মেয়াদের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগদান করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন: চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানোর দাবিতে ক্ষোভে উত্তাল শিক্ষার্থীরা

জানা গেছে, উপচার্য হিসেবে তালিকায় থাকা মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. নুরুল আবছার খানের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। তাঁর আপন ছোট ও বড় ভাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া তিনি ২০০৪-২০০৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপির প্যানেল (সোনালী দল) থেকে শিক্ষক সমিতিতে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

শিক্ষকরা বলছেন, প্রস্তাবনায় প্রথম প্রার্থী চুক্তিভিত্তিক হিসেবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ বিভাগ পরিচালনার জন্য সিভাসুতে যোগদান করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্তও নন। তাঁর বিভাগের একমাত্র অধ্যাপক হচ্ছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ২৬ জনই সহকারী ও সহযোগী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

শিক্ষকরা আরও জানান, প্রস্তাবনায় বাকি দুজন প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। দুজনই দ্বিতীয় গ্রেডের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন প্রথম গ্রেডের। যারা উপচার্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু সেখানে নিয়ম না মেনে ভিসি নিয়োগের যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আবছার খান  আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমি বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি সঙ্গে জড়িত রয়েছে, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে চাকরিও ছেড়ে দেব। এটি আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অপপ্রচার।’

এদিকে সিভাসুর শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভিসি নিয়োগের যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে, সেটির প্রথমজন ২০০৪-২০০৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপির প্যানেল (সোনালী দল) থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাবনায় বাকি দুজন বিশ্বদ্যিালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে এখানে যারাই কর্মরত রয়েছেন তাদের মধ্যে এই দুজন অন্তত ১০ জনের জুনিয়র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রতিষ্ঠানে কাকে ভিসি করবে-না করবে, সেটা রাষ্ট্রের বিষয়ে। আমি ওই প্রস্তাবনা পাঠানোয় সম্পৃক্ত ছিলাম না।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!