চট্টগ্রামে পাহাড়ে পাহাড়ে বসতি, বর্ষা এলেই তোড়জোড়—চলে দৌড়ানিও

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কম ভাড়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব পাহাড়ে বসবাস করছেন। প্রতি বছর বর্ষায় ভারী বর্ষণে পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বর্ষা শেষে আবারও ফিরে আসে সেই পুরনো চিত্র।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পাহাড়ে বসবাসরতদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

জানা যায়, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ে বসবাসকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উচ্ছেদ নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে পাহাড়ে অবৈধ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পাহাড় কাটা বন্ধ ও পুনর্বাসনের সমাধান না হওয়ায় সুফল মিলছে না।

অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে পাহাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেওয়া হয়। পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করে প্রভাবশালীরা এসব বসতি থেকে কোটি টাকা আয় করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরাবরই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন।

আরও পড়ুন :চট্টগ্রাম শহরে ভয়াবহ জলজট, দায় এড়াতে ব্যস্ত চসিক—চউক

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৬ বছরে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ২৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। ২০০৭ সালের ১১ জুন সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । ওই বছর ২৪ ঘণ্টায় ৪২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে কয়েকটি পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের সংখ্যা ২৬টি। সেগুলো হলো- পলিটেকনিক হল সংলগ্ন পাহাড়, সেনানিবাস এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিল পাহাড়, ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক এলাকার ঝিল-১, ২, ৩ পাহাড়, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়, লেকসিটি বিজয় নগর পাহাড়, ফিরোজ শাহ কলোনি, আমিন জুটমিল সংলগ্ন টাংকির পাহাড়, উত্তর পাহাড়তলী জয়ন্তিকা আবাসিক সংলগ্ন পাহাড়, গার্ডেন ভিউ সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, আকবর শাহ বেলতলী পাহাড়, পলিটেক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়, লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়, হারুন সাহেবের পাহাড়, নাছিয়া ঘোনা এলাকা, চিড়িয়াখানার পেছনের পাহাড়, মধুশাহ পাহাড়, জালালাবাদ সংলগ্ন পাহাড়, নাগিন পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ সংলগ্ন মীর মো. হাসানের পাহাড়, এম আর সিদ্দিকির পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, রৌফবাদ ও অক্সিজেন এলাকার ভেড়া ফকিরের পাহাড়।

তবে ধসের শঙ্কায় থাকা পাহাড়গুলো হলো- বিজয় নগর, মতিঝর্না, ফয়’স লেক ঝিল-১ ২, ৩ ও টাংকির পাহাড়।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে ২৬ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে ৬ হাজার ৫৫৮ পরিবার। এসব পাহাড়ের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় রয়েছে ১০টি।

তবে সবচেয়ে বেশি অবৈধ বসবাসকারী রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোতে। সরকারি ১৬ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে ৬ হাজার ১৭৫ পরিবার। আর বেসরকারি ১০ পাহাড়ে বসবাস করছে ৩৮৩ পরিবার।

এ বিষয়ে জানতে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে কাট্টলি সার্কেলের এসিল্যান্ড মো. ওমর ফারুক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০০টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের শিগগির উচ্ছেদ করা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!