চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণে পুলিশ—ছাত্রলীগ নেতাদের ঘুম পাড়িয়ে শিবিরের ঝটিকা মিছিল করলেও পুলিশের তৎপরতায় ভেস্তে গেছে নগর উত্তরের মিছিল পরিকল্পনা।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মিছিল করার আগাম খবর ছিল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। তারা বিষয়টা জানান নগর পুলিশের বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) কর্তাদের কাছে। এমন বার্তা পেয়ে চট্টগ্রাম নগরের চান্দঁগাও থানার মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় সাদা পোশাকে অবস্থান নেন নগর পুলিশের বিশেষ শাখারা সদস্যরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশ—ছাত্রলীগ নেতাদের ঘুম পাড়িয়ে শিবিরের ঝটিকা মিছিল
৬ ফেব্রুয়ারি (রোববার) সকাল সাড়ে সাতটায় একের পর এক মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে শিবিরের নেতাকর্মীরা। হাতে ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালির বড় ব্যানার। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে জড়ো হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ সময় আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া সাদা পোশাকের পুলিশ ধাওয়া দেয় শিবির কর্মীদের। পুলিশের ধাওয়া খেয়েই ব্যানার ফেলে পালিয়ে যায় তারা।
এদিকে একই সময় শিবির চট্টগ্রাম নগর দক্ষিণ শাখা মিছিল শেষ করেছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাদের ঘুমে রেখেই। শিবির মিছিল করার বিষয়টি বন্দর থানা পুলিশও জানত না, এমন তথ্য মিলেছে পুলিশের কাছ থেকেই। জানা গেছে, মিছিলের কথা শুনে থানা পুলিশের ফোর্স আসার আগেই শেষ হয় মিছিলের সব আয়োজন।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) নগরের বন্দর থানার তালতলা সিরাজুল হক এন্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়।
সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জড়ো হয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। এরপর মিছিলটি চট্টগ্রাম বন্দর পূর্ব আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ সামনে ইউটার্ন নেয়। তারপর আবারও তালতলা সিরাজুল হক এন্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের সামনে এসে শেষ হয়।
স্থানীয়রা জানান, শিবিরের মিছিলের স্পট থেকে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের বাড়ির ব্যবধান মাত্র এক কিলোমিটারের। জাকারিয়ার বাড়ি একই ওয়ার্ডের বাচাশাহ মাজার এলাকায়।
এ ব্যাপারে জানতে সিএমপির বন্দর থানার ওসি জাহেদুল কবিরকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাড়া পাওয়া যায়নি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মুঠোফোনেও।
আরও পড়ুন: শ্রমিক লীগ সভাপতি খুন—সঙ্গীসহ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার শিবির ক্যাডার তাহের
এর আগে ২০২১ সালে সকাল ৮টায় নগরের পাহাড়তলী থানার ডিটি রোড আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরির সামনে জড়ো হয়েছিল শিবিরের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিলটি পাহাড়তলী বাজার মোড়ে গিয়ে হয়। মিছিল শেষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছিল।
ছাত্রশিবির ছিল ছাত্রসংঘ
একাত্তর সালের আগে জামায়াতের এই ছাত্রসংগঠনের নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। ১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রশিবির।
একাত্তরে তাণ্ডব, স্বাধীন দেশেও সহিংসতা
উত্তাল একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে যুক্ত ছিল ছাত্রসংঘ তথা আজকের ছাত্রশিবির। হানাদার বাহিনীর হয়ে তারা নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির ওপর। স্বাধীনতার পরও থামেনি তাণ্ডব। একাত্তরের ছাত্রসংঘ স্বাধীনতাপরবর্তী সহিসংসতা ছড়ায় ছাত্রশিবির নামে। ছাত্রদের রগ কেটে দিয়ে, পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে, ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেতলে দিয়ে, পেট্রোল বোমা মেরে আগুন জ্বালিয়ে অসংখ্যা খুনের অভিযোগ রয়েছে শিবিরের বিরুদ্ধে।