নিষিদ্ধ শাপলা পাতা মাছ বিক্রি হলেও ঠেকানোর কেউ নেই

চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপে কখনো বড়শি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে বিলুপ্তি প্রজাতির শাপলা পাতা মাছ। বিলুপ্তপ্রায় এই মাছটি আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিলুপ্তি প্রজাতির এ শাপলা পাতা মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও আনোয়ারার মাছের আড়ত ও হাটবাজারে অবাধে চলছে বেচাকেনা। যদিও জেলে ও আড়তদাররা বলছেন, শাপলা পাতা মাছ যে ধরা বা বাজারজাত করা নিষিদ্ধ তা তারা জানেন না। তবে এই মাছে কাঁটা না থাকা এবং সুস্বাদু হওয়ায় জেলেরা অতি মুনাফার লোভে এটি ধরতে ও বাজারজাত করতে বেশ আগ্রহী বলে জানান আড়তদাররা।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের মাছ বিক্রেতারা জানান, এই মাছ খুব স্বাদ এবং শরীরের জন্যও খুব উপকারী। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় এটি বিক্রি করতে পারলে মুনাফাও বেশি হয়। উপজেলার জয়কালী হাট, মালঘর বাজার ও ছত্তার হাটে বেশি বিক্রি হয় শাপলা পাতা মাছ।

উপজেলার সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত কালাবিবির দিঘি মৎস্য আড়ত সূত্র জানা যায়, গত বর্ষায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগরের সদ্বীপ লেক থেকে একটি ৬ মণ ওজনের এবং আরেকটি ৪ মণ ওজনের শাপলা পাতা মাছ বড়শি দিয়ে শিকার করে আনোয়ারার জেলেরা। এ দুটি মাছ বিক্রি হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টাকায়!

এদিকে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ২০১৭ আইনের ১৯-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কমিটি থাকবে। যা জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। তবে আনোয়ারা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হলেও এখানে এ কোনো কমিটি নেই বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

১৭-এর এই আইনে আরেক ধারায় বলা হয়েছে, বিলুপ্তিপ্রায় জীববৈচিত্র্য প্রাণী কোনো সময় ধরা বা বাজারজাত করা যাবে না। করলে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এ মাছ বিক্রি হলেও বিলুপ্তি প্রজাতির শাপলা পাতা মাছ রক্ষায় কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে। সাগরে যে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো রয়েছে সেগুলোর অধিক চলাচলের কারণে সাগরে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ এ দুটি বিষয় এক ও অভিন্ন। আসলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উদাসীন।

তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা না হলে দিন দিন পরিবেশের আরো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। পরিবেশের স্বার্থে শাপলা পাতা মাছ রক্ষায় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।

ড. কামাল হোসেন বলেন, শাপলা পাতা মাছ মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। দেশে শাপলা পাতা মাছ ধরা এবং বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এ মাছ সবখানে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে নিধন চলতে থাকলে একসময় শাপলা পাতা মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক বলেন, শাপলা পাতা মাছ বিলুপ্তির পথে। এ মাছ ধরা এবং বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। শাপলা পাতা মাছ রক্ষায় সামনে থেকে আরো জোরদার বাজার মনিটরিং শুরু করা হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিতত্র্য সংরক্ষণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শাপলা পাতা মাছ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ মাছ রক্ষায় র‌্যাব ও নৌপুলিশের সমন্বয়ে বিশেষ ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সাগরে এ মাছ ধরতে না পারলে অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা আর বাজারজাত করতে পারবে না।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!