চিকিৎসকের প্রাথমিক সন্দেহ ছিল পেটে টিউমার হয়েছে। এরপর করা হয় আলট্রাসনোগ্রাম। তারপর চিকিৎসক নিশ্চিত হন, পেটে টিউমার হয়েছে। তাই দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন রোগীকে।
শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাতে রোগীর অপারেশন হলো। কিন্তু এর পরের ঘটনায় সবাই হতবাক। কারণ রোগীর পেট থেকে টিউমার নয়, বের হয়ে এলো ‘ব্যান্ডেজ’!
ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার শহরের ফুয়াল আল খতিব হাসপাতালে। ভুক্তভোগী নারী সুফিয়া আকতার (২৮) উখিয়ার রত্নপালং ইউনিয়নের তেলীপাড়া এলাকার জিয়াউদ্দিনের স্ত্রী।
জানা গেছে, শহরের বেসরকারি ‘জেনারেল হাসপাতালে’ ৭ মাস আগে গর্ভবতী সুফিয়া আকতারকে সিজার করেন গাইনি রোগের চিকিৎসক তাজিনা শারমিন। সিজারের সময় পেটে ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করে দেন তিনি। সেই ব্যান্ডেজ বৃহস্পতিবার অপারেশন করে বের করেন ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের ডা. শাহ আলম। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা নামলেই মাদকের গন্ধ উড়ে বাতাসে—আউটার স্টেডিয়ামে
ভুক্তভোগী সুফিয়া আকতারের ভাগিনা সাইমুম উদ্দিন নয়ন জানান, ৭ মাস আগে তার খালা সুফিয়াকে সিজার করেন জেনারেল হাসপাতালের ডা. তাজিনা শারমিন। এর ১৫ দিন পর ওই নবজাতক মারা যায়। এরপর গত দুমাস আগে হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করেন খালা। ব্যথা বেড়ে গেলে প্রথমে উখিয়ার কোটবাজারের ওরিয়ন হাসপাতালে ডা. সামিয়াকে দেখানো হয়। এ সময় সামিয়া ডা. শাহ আলমের কাছে রেফার করেন।
কিন্তু তারা ডা. শাহ আলমকে না দেখিয়ে ডা. তাজিনা শারমিনের কাছে নিয়ে যান। ডা. তাজিনা শারমিন রক্ত জমাট বেঁধেছে দাবি করে ১ মাসের ওষুধ দেন সুফিয়াকে। সেই ওষুধ সেবন করার পরও সুস্থ না হওয়ায় আবারও তাঁকে দেখানো হয়।
এবার ডা. তাজিনা শারমিন আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য ডা. ওসমানুর রশিদের কাছে রেফার করেন। সেই আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট দেখে ডা. তাজিনা শারমিন বলেন, সুফিয়ার পেটে টিউমার হয়েছে এবং সেটি দ্রুত অপারেশন করে বের করতে হবে।
এ অবস্থায় ডা. তাজিনা শারমিনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ভুক্তভোগীরা ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে ডা. শাহ আলমের কাছে যান। পরে তার পরামর্শ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকেলে ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে অপারেশন করে পেট থেকে টিউমারের পরিবর্তে বের করেন ব্যান্ডেজ। ব্যান্ডেজ পঁচে তার পেটে ইনফেকশন হয়েছে বলে চিকিৎসক তাদেরকে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারী সুফিয়া আকতার এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক তাজিনা শারমিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান নয়ন।
আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুর কূপ’ মিরসরাইয়ের অপরূপ পাহাড়ি ঝরনা, বাতিল হচ্ছে ইজারা
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ডা. তাজিনা শারমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রোগীর পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতাম।
ডা. তাজিনা শারমিনের কাছে দুমাস আগে রক্তজমাট বেঁধেছে ধারণা করে ওষুধ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এদিকে রোগীর স্বজন নয়ন অভিযোগ করে বলেন, ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশন করে বের করা ব্যান্ডেজ প্রথমে রোগীর স্বজনদের দেখালেও পরে গায়েব করে ফেলে। তবে ওই সময় তিনি ব্যান্ডেজের ভিডিও ধারণ করে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যান্ডেজটি ক্লিনারেরা ফেলে দিয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমের সামনে আনতে অপারগতা প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।