চান্দগাঁওয়ে ইটের গাঁথুনি দিলেই দিতে হয় চাঁদা, ইশারায় চলে থানা পুলিশও

আদালতে গেল মামলা, আসামি গ্যাংয়ের ১০

কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলেই হাজির হয় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। না দিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে কাজ বন্ধের হুমকি, এরপর মারধর। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে প্রায়সময়ই বিশাল বাহিনী নিয়ে দেওয়া হয় অস্ত্রের মহড়া। থানা-পুলিশও নাকি চলে তাদের ইশারায়!

বলছি নগরের চাঁন্দগাও থানার ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ইয়াছিন হাজীর বাড়ির এলাকার হাসান ও তার গ্যাংয়ের কথা।

তবে এবার মূলহোতা হাসানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। এর আগে চান্দগাঁও থানায় বেশ কয়েকবার গিয়েও মামলা করতে ব্যর্থ হন তিনি। উল্টো তাদেরকে অপরাধী বানানোর তোড়জোড় শুরু করে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই নারীর।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৬ এ ভুক্তভোগী রেহানা বেগম নামের এক নারী বাদী হয়ে হাসানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- মো. হাসান (২৫), সায়েম মুরাদ (৪০), বাচা মিয়া প্রকাশ বাচ্চু (৩০), ওসমান গনি মানিক (৪০), মো. রিপন (২৫), মো. হাসান (৩০), আরিফুল ইসলাম ইরাদ (৩৩), মো. কামাল (৪২), আদিত্য পাল (২২) ও আমির হোসেন প্রকাশ ম্যাক্সওয়েল (২৪)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নগরের চাঁন্দগাও থানার ইয়াছিন হাজীর বাড়িতে নিজ মালিকানার ১০ শতক জায়গায় দোতলা ভবন নির্মাণ করেন প্রবাসী আবুল হোসেন। এসব কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় মামলার বাদী রেহানা বেগমের স্বামী নুরুল বশরকে।

গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে হঠাৎ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাজির হন হাসান ও তাঁর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসময় নুরুল বশরের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। দাবি করা চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধের হুমকি দেন।

এদিকে এ ঘটনা দেখে নুরুল বশরের স্ত্রী ও তাঁর ছেলে রাসেল ঘটনাস্থলে এলে তাদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেন হাসানসহ অন্যরা। পরে রাসেল জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাতেনাতে মামলার আসামি মো. হাসান, মো. রিপন ও মো. হাসানকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।

এরপর বিকেল ৪টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে নুরুল বশর ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। এসময় ভবনের গেইটে লাগানো সিসি ক্যামেরা, ডিপকল ও ওয়াসার পাইপ ভেঙে ফেলে। এ কাজে বাধা দিতে গেলে তাদের করা হয় মারধর। একপর্যায়ে রেহানা আক্তারের স্বামী নুরুল বশরকে ছুরি মেরে গুরুতর আহত করা হয় এবং তাঁর পকেটে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় হাসান ও তাঁর সঙ্গীরা। মারধরের সময় স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী রেহানা বেগম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে আবুল হোসেন নামের এক প্রবাসী একটি ভবন নির্মাণ করছেন। আমার স্বামী নুরুল বশরকে এই ভবনের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি মাসের ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে মামলার ১ নম্বর আসামি হাসান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে এবং আমাকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অভিযোগ করতে থানায় গেলে সহযোগিতা করা তো দূরে থাক উল্টো আমাদের অপরাধী বানানোর তোড়জোড় শুরু করে পুলিশ। দুদিন থানায় ঘুরেও মামলা করতে পারিনি। পরে আদালতের শরণাপন্ন হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, হাসান ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের কেয়ারটেকার নুরুল বশরের কাছে চাঁদা দাবি এবং মারধর করার সিসিটিভি ফুটেজ ও ছবি আছে। এসব থানা-পুলিশ জেনেও অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার আসামি মো. হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাঁন্দগাও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঈনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরএন/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!