চট্টগ্রাম কারাগারেও প্রতারণার ফাঁদ, ইউপিডিএফ নেতার কব্জায় বন্দীরা

তিন বছর আগে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউনাইটেড পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা প্রকাশ তালুকদার ওরফে প্রকাশ চাকমা (৩২)। দীর্ঘদিন কারাবন্দি তিনি। কারাগারে থেকেই তিনি পরিবারকে করছেন আর্থিক সহায়তা!

ফাঁদ পেতে প্রকাশ নানা প্রতারণা করছেন হাজতি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে। এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে তাঁর হয়ে কাজ করেন জয় চাকমা। তিনি আইনজীবী পরিচয়ে হাজতিদের পরিবার থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে হাজতি ও তাদের পরিবার জিম্মি হয়ে পড়েছে জয়-প্রকাশ সিন্ডিকেটের কাছে।

রোববার (৯ জুলাই) এক হাজতি ডাকযোগে জয়-প্রকাশের নামে প্রতারণার অভিযোগ পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার কাছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার।

অভিযোগে ভুক্তভোগী হাজতি উল্লেখ করেন, নগরের একটি থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পদ্মা-১৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা অবস্থায় হাজতি প্রকাশ তালুদার ওরফে প্রকাশ চাকমা ওয়ার্ডে আসেন। এরপর কী মামলা জানতে চান তিনি। অস্ত্র মামলা বলার পর প্রকাশ বলেন, ‘তোমার মামলায় আমি জামিন করিয়ে দিবো, তোমার পরিবারের নম্বর দাও। জেলখানার বাইরে আমার এক ভাই আছে যার নাম জয় চাকমা। সে তোমার পরিবারের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা নেবে।’

এসময় প্রকাশ আরও বলেন, দেখো আমি জেলখানা থেকে অনেক আসামি বের করেছি এবং আরও অনেক আসামি আমার হাতে আছে। আমি প্রতিদিন জেলখানার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে হাজতিদের মামলা সম্পর্কে জেনে জয় চাকমাকে দিয়ে কন্ট্রাক্ট করে থাকি। বিনিময়ে জয় চাকমা আমাকে এবং আমার পরিবারকে প্রতি মামলা হিসাবে টাকা দেয়।

এরপর প্রকাশ প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগী হাজতির স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জয় চাকমার মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু ৬ মাস পার হলেও জামিন করাতে পারেননি তিনি। পরে টাকা ফেরত চাইলে প্রকাশ বলেন, ‘জয় চাকমা বলেছে টাকা খরচ হয়ে গেছে ফেরত দেওয়া যাবে না।’ পরে ভুক্তভোগীর স্ত্রী অন্য এক আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন করান।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে হাজতিদের পরিবারের ফোন নম্বর নিয়ে জয় চাকমার মাধ্যমে হাজতি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রকাশ চাকমা। এছাড়া কারাগারে এমন আরও একাধিক ভুক্তভোগী রয়েছে বলেও জানানো হয়। কারাগারে আত্মীয় পরিচয়ে টিকিট কেটে ভুক্তভোগী হাজতিদের সঙ্গে দেখা করান জয় চাকমা। এতে কারাবিধি অনুযায়ী প্রতি ১৫ দিন পর দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজতিদের পরিবার-পরিজনেরা। ফলে জয় চাকমার ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে এসব পরিবার। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার অনুরোধও করেন ভুক্তভোগী হাজতি।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৯ জুন নগরের বায়েজিদ থানার অক্সিজেন বালুছড়া এলাকার চেকপোস্টে তল্লাশির সময় চারটি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলিসহ দুজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজন রাঙামাটি জেলার বাগাইছড়ির আনন্দ তালুকদারের ছেলে প্রকাশ তালুকদার। অন্যজন একই জেলার বালাইছড়ির বুদ্ধিধন চাকমার ছেলে প্রিয় চাকমা (৩০)।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. এমরান হোসেন মিঞা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযোগ এলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। প্রকাশ তালুকদার নামে একজন কারাবন্দী আছেন বলে জানান তিনি।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!