চট্টগ্রামে যুবকের আত্মহনন, শাশুড়ির ইশারায় মারধর

নগরে শাওন নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টেবার) রাত ১১টার দিকে ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে রাত সাড়ে তিনটায় ওই যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের সময় রুমের দরজা বাইরে থেকে লাগানো ছিল। এদিন রাত ১১টার দিকে পর্দার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ দেখতে পান ঘরের ইনচার্জ। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে রাত সাড়ে তিনটায় ওই যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ এসময় আত্নহননকারী যুবকের লাশের পাশে কোরআন শরীফের উপর দিয়াশলাই বক্স দিয়ে চাপা দেওয়া দুটি চিরকুট পাওয়া যায়। তবে চিরকুটের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আড়াই বছর আগে ভালোবেসে শারমিনকে (১৫) বিয়ে করেন শাওন৷ শুরুতে পরিবার মেনে না নিলেও পরে মেনে নেয়। কোরবানির ঈদের আগে কিংবা পরে এই দম্পতির ঘরে একটি বাচ্চাও জন্ম নেয়। কিন্তু বাচ্চাটি মারা যায়৷ এরপর হঠাৎ শাওন ও শারমিনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে শারমিনকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে অভিমানে দিন কাটতে থাকে শাওনের। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে শাওনকে নিজ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়৷ তবে শাওনের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য।

জানা যায়, শাওন ছিল পেশায় রাজমিস্ত্রী৷ তার স্ত্রী শারমিন গার্মেন্টস কর্মী। মেয়ের বাড়ি নিকলী থানার দৌলতপুর এলাকায়৷ দুমেয়ের মধ্যে পরিবারের বড় মেয়ে ছিলেন শারমিন৷ সবুজবাগের খানবাড়ি এলাকার আলমগীর খানের ভাড়া ঘরে থাকে শারমিনের পরিবার।

আরও পড়ুন : রাউজানে তরুণের আত্মহননের নেপথ্যে ‘মোবাইল’

নিম্নবিত্ত শাওন স্ত্রী নিয়ে থাকতেন হালিশহর সবুজবাগ এলাকার নজরুল জমিদারের বস্তিতে৷ সেখানে তার কেটেছে ৭ বছর। ছোটবেলায় বাবা হারানো শাওন একাই থাকতেন। মা মরভানু থাকেন কটিয়াদী থানার করগাঁও ইউনিয়নে।

স্থানীয় প্রতিবেশী রাশেদা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, স্ত্রীকে বাপের বাড়ি নেওয়ার পর ছেলেটা একা থাকত৷ শুনেছি শাওনকে হালিশহর নয়বাজার এলাকায় ২-৩ দিন আগে মেয়ের মায়ের ইশারায় মারধর করে স্থানীয় ছেলেরা। এরপর গতকাল (মঙ্গলবার) শুনলাম সে আত্নহত্যা করেছে।

প্রতিবেশী আফালু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ছেলেটা মারা গেছে কিন্তু বাইরে থেকে দরজা লাগানো ছিল। বস্তির ইনচার্জ ভাড়া তুলতে যখন আসে তখন দেখে সে ঝুলে আছে। কিন্তু ধারণা করছি আরও একদিন আগে সে মারা গেছে। এটা কি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা সেটা জানি না। তবে ছেলেটা ভালো ছিল।

এ বিষয়ে শাওনের ছোট ভাই সেলিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি বাড়িতে। আমার মা যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। সেখানে আমার বোনসহ যা করার করবে। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না৷ তবে শুনেছি ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির ঝগড়া ছিল। কী কারণে মারা গেছে বা কূ হয়েছে সেটা জানি না।

যোগাযোগ করা হলে হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কায়সার হামিদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রাথমিক ধারণায় মনে হচ্ছে ওই যুবক আত্নহত্যা করেছে। এছাড়া ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে আত্মহত্যা করেছে৷ এ ঘটনায় মৃত্যু সংক্রান্ত একটি মামলা নেওয়া হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর জানা যাবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এআইটি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!