বাঁশখালীতে অফিস করেন না পাউবো কর্মকর্তারা—‘অজুহাত’ ২৫ বছর আগের ডাকাতি

ডাকাতির অজুহাতে ২৫ বছর ধরে বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বাঁশখালী থাকেন না। করেন না অফিসও। অথচ চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান কার্যালয় বহদ্দারহাট এলাকায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বসে অফিস করছেন তারা।

এদিকে কর্মকর্তারা অফিস না করায় বাঁশখালীতে ৮ একর জায়গায় স্থাপন করা পাউবো অফিসের ৮টি ভবন এখন পরিত্যক্ত। এছাড়া এসব ভবনের বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা, জানালা ও টিন চুরি হয়ে গেছে। অথচ প্রতিবছর এ ভবনের সংস্কারের নামে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসভবনে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। ওইসময় থেকে ডাকাতির অজুহাতে সব কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগরের বহদ্দারহাটে নিবার্হী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বসে অফিস করছেন। বর্তমানে ডাকাতি বন্ধ হলেও পাউবো কর্মকর্তাদের সেই পুরনো অজুহাত বন্ধ হয়নি। ফলে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে তদারকি না থাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার গুনাগরীতে ৮ একর জায়গায় পাউবোর কার্যালয়। এখানে রয়েছে একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় ও বাসভবন, ৩ জন সহকারী প্রকৌশলী, ১ জন সার্ভেয়ার, ১ জন কার্য সহকারী, ১ জন অফিস সহকারী ও ১ জন এমএলএসএসের স্টাফ কোয়ার্টার ও অফিস কক্ষ, রেস্ট হাউস, রান্নাঘর, গাড়ির গ্যারেজসহ ৮টি বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। তবে সবগুলোই এখন পরিত্যক্ত। এসব ভবন তদারকিতে আছেন অফিস সহকারী সুজিত মালা এবং এমএলএসএস মো. জাহাঙ্গীর। পাউবোর জায়গায় শতাধিক গাছে আম, কাঁঠাল ও লিচু ধরেছে। কিন্তু যে যার মতো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে গাছের বিভিন্ন ফল।

আরও পড়ুন : বাঁশখালীতে ‘আসহাব চেয়ারম্যান’ হাজারো গাছ কাটলেও বন বিভাগ জব্দ দেখাল ২০০!

জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই কার্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থবছর শেষের পথে হলেও কাজ এখনও শেষ হয়নি। এছাড়া বাঁশখালীতে গত ২০১৫-২০১৭ সালে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দে স্থায়ী বেড়িবাঁধ টানাহেঁচড়া করে ২০২২ সালে কাজ শেষ করার মাত্র ২ বছরে ভেঙে যায়।

এলাকাবাসী অভিযোগ, কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কাজ তদারকি না করায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হওয়ার কারণে ভেঙে যাচ্ছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে পৃথক পৃথক বরাদ্দে ৫২৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। সব কাজ তদারকির অভাবে অল্প সময়ে ধ্বসে পড়েছে এবং বিলীন হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে বারবার একই জায়গায় বরাদ্দ করতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ডাকাতির কারণে কর্মকর্তাদের কেউ সেখানে বসেন না। তবে সেখানে গিয়ে রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন এবং চলমান উন্নয়নকাজ নিয়মিত তদারকি করেন। পরিত্যক্ত ভবনগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভবন সংস্কারের পর সেখানে পুরোদমে কর্মকর্তারা অফিস করবেন।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!