চট্টগ্রামে ‘মদকাণ্ডে’ রেহাই পাচ্ছে না আমদানিকারক—সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কেউই

একের পর এক বড় বড় মদের চালান আটকের ঘটনায় আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর। এ অবস্থায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। প্রতিটি ঘটনার জন্য হচ্ছে পৃথক তদন্ত কমিটি। আবার আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে হবে ফৌজদারি মামলা। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে ‘মদকাণ্ডে’ রেহাই পাচ্ছে না আমদানিকারক—সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কেউই।

মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে চীন থেকে মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পাঁচ কনটেইনার মদ আটক করা হয়েছে। এসব চালানের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি চেষ্টার বিষয়টি সামনে এসেছে। আটক পাঁচ চালানের প্রত্যেকটির জন্য আলাদাভাবে ছয় সদস্যের পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

চট্টগ্রাম বন্দরে মদকাণ্ডের শুরুটা হয়েছিল গত শুক্রবার (২২ জুলাই)। এদিন মদভর্তি দুটি কনটেইনার আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে আটক করা হয়। কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ঘোষণায় আসা চালান দুটি আটকের পর টনক নড়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।

এ ঘটনার একদিন পর গত রোববার (২৪ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর থেকে এক কনটেইনার মদ আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা। পরদিন সোমবার (২৫ জুলাই) বন্দরের ভেতর থেকে আটক করা হয় মদের আরও দুটি কনটেইনার।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কাস্টমসের চোখে ধুলো দিতে গিয়ে ১ কনটেইনার বিদেশি মদ ধরা পড়ল বন্দরে

তিনদিনের ব্যবধানে আটক মদের এই ৫টি চালান কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, নীলফামারী ও মোংলা ইপিজেডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে গার্মেন্টস পথ্য আনার তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। কিন্তু আটক ৫ চালানের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে ৫ হাজার ৬১৮ কার্টনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৭৮ হাজার ৩২২ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এছাড়া ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম শেষে একটি কনটেইনারে মদের সঙ্গে ৫৩ হাজার প্যাকেটে ১০ লাখ ৬০ হাজার শলাকা আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি সিগারেট পাওয়া যায়।

এসব পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মোট মূল্য ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত আটক মদের ৫ চালানে মোট ৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এসব পণ্যের আমদানিকারক।

জানা গেছে, পাঁচ তদন্ত কমিটি প্রত্যেক চালান আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে কাজ করবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার (এআইআর শাখা) সাইফুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে পাঁচটি চালান আটক করা হয়েছে তারমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে আটক দুটি চালান ও বন্দরের ভেতর থেকে আটক একটি চালানে জাফর আহমেদ নামে একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। আটক প্রথম তিন চালানের ঘটনায় আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নামে ফৌজদারি মামলা করছি। এছাড়া বন্দরের ভেতর থেকে সর্বশেষ আটক চালান দুটি যেহেতু খালাসের জন্য কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি তাই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল না। এজন্য আটক এ চালান দুটির জন্য শুধুমাত্র আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ফৌজদারি মামলার মধ্যেই এ ঘটনার বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ শেষ না। যে পাঁচটি চালান এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে প্রত্যেকটি চালানের জন্য আলাদা আলাদাভাবে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এরমধ্যে আমাদের তদন্ত কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ। তদন্ত কমিটির যথাযথ তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের কোনো না কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে, আমরা তাদের সবার বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

ভুল তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য এনে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এ ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেক ঘটনায় আমাদেরকে নতুন কোনো না কোনো শিক্ষা দেয়। মদের এ পাঁচ চালান আটকের পরও এরকম বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এসব বিষয়ে আমরা যথাযথ পর্যবেক্ষণ করছি। আগামীতে এভাবে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে আমরা সেসব বিষয়গুলোর ওপর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!