চট্টগ্রামে ডিম সিন্ডিকেটের কারসাজি, হঠাৎ দাম বাড়ল ডজনে ৪০ টাকা

বাজার মনিটরিংয়ের হদিস নেই

চট্টগ্রামে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে এক ডজন ডিমে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা! প্রতি পিস ডিম কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকা। কোথাও কোথাও তো একটি ডিমি ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে! এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

এদিকে গত বছরের আগস্টে একই ছিল ডিমের বাজারের চিত্র। চলতি বছরের আগস্টেও ডিমের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে অসাধু সিন্ডিকেট।

বাজার মনিটরিং না থাকায় সিন্ডিকেট চক্র বারবার দাম নিয়ে এমন কারসাজি করছে বলে মনে করছেন ভোক্তারা। তাই নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানান তারা।

নগরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানে এক ডজন মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম ১৩ টাকারও বেশি। আবার কোনো কোনো দোকানে তো একটি ডিমের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা! এছাড়া হাঁসের ডিম প্রতিডজন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে বৃক্ষমেলার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, লাখ টাকার বনসাই বিবর্ণ

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গড়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকা ২০ পয়সা। গত দুমাসে মুরগির খাদ্যের দাম বাড়েনি। তবে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ যদি বেড়েও থাকে তাহলে প্রতি পিস ডিমে উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ২০ পয়সা বাড়তে পারে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত ৩ আগস্ট থেকে নগরে ডিমের দাম হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। ১৪০ টাকা ডজনের মুরগির ডিম হঠাৎ হয়ে যায় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। এর পর থেকে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম। বর্তমানে বাজারে এক ডজন মুরগির ডিমের দাম ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। এছাড়া একই সময়ে ১৬০ টাকা ডজনের হাঁসের ডিমের দাম ছাড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরি!

নগরজুড়ে গত কয়েকদিনের জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এর মধ্যে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের।

বহদ্দারহাট এলাকার ক্রেতা জামিল হায়দার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করে স্ত্রী সন্তানসহ ৪ সদস্যের সংসার চালাই। বাজারে মাছ-মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি। সপ্তাহে আমাদের দেড় থেকে দুডজন ডিম লাগে। আগে এ পরিমাণ ডিমে খরচ পড়তো ২শ থেকে আড়াইশ টাকা। হুট করে দাম বাড়ায় সেই খরচ এখন ঠেকেছে ৩শ থেকে সাড়ে তিনশ টাকায়! ডিমের দাম যদি এভাবে লাগামছাড়া বাড়তে থাকে তাহলে আমার মতো মানুষেরা সংসার চালাবে কী করে? বাজার মনিটরিং জরুরি।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চকবাজার এলাকার খুচরা ডিম ব্যবসায়ী মিন্টু সেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াননি। পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। বেশি দামে পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। আমাদের সীমিত লাভ।

চট্টগ্রামে ডিমের বড় পাইকারি বাজারখ্যাত পাহাড়তলী বাজারে টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের নানা জায়গা থেকে ডিম আসে। এখান থেকে রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ নগরের বিভিন্ন জায়গায় ডিম সরবরাহ করা হয়।

ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহজাহান স্টোরের ব্যবস্থাপক মো. সোহেল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাজারে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে ঠাণ্ডা-গরমের কারণে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দেশে ডিমের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা টাঙ্গাইল থেকে ডিম আনি আড়তে। ইদানিং টাঙ্গাইলে আগের মতো সহজে ডিম পাচ্ছি না। ওখানেও সংকট চলছে। মূলত ডিমের দাম গত এক সপ্তাহের মধ্যে বেশি বেড়েছে। বুধবার (৮ আগস্ট) টাঙ্গাইল থেকে ডিম এনেছি প্রতি একশ পিস ১ হাজার ২২০ টাকা দরে। এর মধ্যে গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে আমরা ১ হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি করছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এই মুহূর্তে বন্যাটা হচ্ছে প্রায়োরিটি। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে আমাদের প্রায়োরিটি। বাজারে ব্যাঘাত ঘটলে সেটা দেখার জন্য আরও সংস্থা আছে। বিষয়টি যখন জেনেছি অবশ্যই দেখব।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!