চট্টগ্রামে আকর্ষণের কেন্দ্রে কুমারী পূজা

দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন আজ (২২ অক্টোবর) মহাষ্টমী পূজা। একইসঙ্গে আয়োজন করা হবে কুমারী পূজার। মাতৃরূপে ঈশ্বরের একটি আরাধনা কুমারী পূজা। সেজন্য পূজার্থীরা মাতৃরূপে ঈশ্বরকে আরাধনা করতে কুমারী পূজা করে থাকেন। তবে সব মণ্ডপে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয় না।

শাস্ত্রানুসারে, মহাষ্টমীর দিন মানবকল্যাণে ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারী কন্যাকে মনোনীত করা হয়। বয়সভেদে নাম হয় ভিন্ন। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।

প্রতিবছরের মতো এবারও নগরের পাথরঘাটার শ্রীশ্রী শান্তনেশ্বরী মাতৃ মন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১টায় কুমারী পূজার শুরু বলে জানান মন্দিরের পুরোহিত অধ্যক্ষ শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ।

কুমারী পূজা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাতৃরূপে ঈশ্বরের একটি আরাধনা কুমারী পূজা। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী।

জানা যায়, গতবছর কুমারী পূজার আসন অলংকৃত করেন ৭ বছরের প্রীতি ধর। ৭ বছর হওয়ায় তাঁর শাস্ত্রীয় নাম হয় ‘মালিনী’। শাস্ত্রমতে, ‘মালিনী’ নামে কুমারী পূজিত হলে ধৈনশ্বর্য লাভ হয়।

আরও পড়ুন : মহাষ্টমীতে ‘মালিনী’—কুমারী পূজায় ৭ বছরের প্রীতি

আগের বছর ৬ বছরের বালিকা ‘উমা’ নামে পূজিত হয়েছিল। শাস্ত্রমতে ‘উমা’ নামে কুমারী পূজা হলে ‘শত্রুনাশ’ হয়।

জানা যায়, কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১৬টি উপকরণ দিয়ে। অগ্নি, জল, বস্তু, পুষ্প ও বাতাস-এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়। পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে পরানো হয় নতুন কাপড়। মাথা ও গলায় পরানো হয় ফুলের মালা ও অলংকার। প্রসাধনের নিপুণ সাজে সাজিয়ে তোলা হয় কুমারীকে। এরপরই কুমারীকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শরীর-মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞানরূপে পূজা করা হয়। পূজা শেষে ভক্তরা কুমারী মায়ের উদ্দেশে মিষ্টি, ফল, ফল, দধি ইত্যাদি নিবেদন করেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সাল থেকে নগরের পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এদিকে গতকাল প্রতিটি পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থান ও মহাসপ্তমীর স্নান পূজাঅর্চনা, চণ্ডীপাঠ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, সমবেত প্রার্থনা, প্রসাদ বিতরণসহ নানা ধর্মীয় আয়োজনে পালন করা হয় সপ্তমী পূজা।

এদিন দেবী দুর্গার চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিতে ছোট বড় সকলেই নতুন জামা-কাপড় পড়ে পূজামণ্ডপে সমবেত হয় সকাল থেকে। পূজা শেষে মঙ্গল কামনায় সবাই নেন পুষ্পাঞ্জলি। দুপুরে কিছু পূজামণ্ডপে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। তবে সকালের চেয়ে সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে।

নগরের চকবাজার, এন জে ক্লাব, জেএমসেন হল, কুসুম কুমারী স্কুল, রাজাপুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড়, হাজারী লেইন, টেরিবাজার রঘুনাথ বাড়ি, টেরিবাজার বাই লেইন, নবগ্রহ বাড়ি, পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইন, দক্ষিণ নালাপাড়া ও আগ্রাবাদ এলাকার পূজামণ্ডপে সন্ধ্যা থেকে উপচেপড়া ভিড় ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীর।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!