চকবাজারে দলবল নিয়ে এলেন কাউন্সিলর টিনু, হঠাৎ উধাও টিসিবির পণ্যও!

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর দেড়টা। নগরের চকবাজার কাঁচাবাজারের সামনে দাঁড়ানো একটি অটোরিকশা। এসময় বাজারের তৃতীয় তলা থেকে টিসিবির পণ্য মাথায় করে এনে প্রকাশ্যে গাড়িতে তুলছিল কয়েকজন যুবক। কিছুক্ষণ পর দেখা গেলে ওপর থেকে দলবল নিয়ে নেমে আসলেন কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু। তিনি চলে গেলেন বাজারের পেছেন দিকে।

সরেজমিন আলোকিত চট্টগ্রামের প্রতিবেদকের চোখে পড়ল এমন চিত্র। এছাড়া আশপাশের দোকানদার ও স্থানীয়রা প্রকাশ্যেই দেখেছেন।

এরপর এ নিয়ে এলাকাজুড়ে শুরু হয় নানা প্রশ্ন।

আরও পড়ুন : জামানত হারিয়েও গ্যাং লিডার থেকে কাউন্সিলর টিনু—টিআইবির ‘সংশয়’, ইভিএম নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

এদিকে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে দিনদুপুরে অটোরিকশায় তুলে কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো তা খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় চকবাজারের কাঁচাবাজারের তৃতীয় তলায় উঠে দেখা যায়, টুল-টেবিলে বসে খোশগল্পে ব্যস্ত বিক্রয়কর্মীরা। এসময় কয়েকজন নারী ও পুরুষ তাদের সামনে বসা। তবে টিসিবির কোনো পণ্য দেখা যায়নি। তেলের খালি কাটন স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

পরে কাউন্সিলর কার্যালয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল কাউন্সিলের রুমের ভেতর দুই-তিনজন যুবক বসা। তাদের পাশের টিসিবির তেলের কাটন রাখা হয়েছে। এরপর ওয়ার্ড সচিব তারেক সুলতানের রুমে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় তলায় নেমে হেঁটে আসতে দেখা গেলে টেপ লাগানো টিসিবির বেশ কয়েকটি কাটন। অপর পাশে ৫-৬ জন যুবক কথায় ব্যস্ত।

শেষে নিচে নামতে ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে আসা এক ক্রেতাকে দেখা গেল দাঁড়িয়ে আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্ড নিয়ে পণ্য কিনতে এসে দেখি নেই। দুপুর ১টায় নাকি বিক্রি হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যাদের কার্ড আছে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছে না। আর কাউন্সিলের লোক হলে ভোটার কার্ডের ফটোকপি নিয়ে আসলে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। একজন ৪-৫ প্যাকেজ নিয়ে যাচ্ছে। কাউন্সিলরের সাঙ্গপাঙ্গরা এসব নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ (বৃহস্পতিবার) ভোটার কার্ডের ফটোকপি দিয়ে পণ্য বিক্রি নিয়ে সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়। উপস্থিত সবার প্রতিবাদে বন্ধ হয় অনিয়ম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক দোকান মালিক বলেন, টিসিবির বেশিরভাগ পণ্য বাইরে বিক্রি এবং কাউন্সিলরের লোকদের দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না। কাউন্সিলরের রুম থেকে নিয়ে পেছন দিকে নেমে চলে যায়। এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

পরে ওয়ার্ড সচিব তারেক সুলতান সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কার্ড ছাড়া কাউকে পণ্য দিইনি। তবে কারা অটোরিকশায় পণ্য নিয়ে গেছে তা বলতে পারব না। এরকম কোনো অনিয়ম হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গতবার সাড়ে ৮ হাজার কার্ডে পণ্য দিয়েছিলাম। এবার সাড়ে ৪ হাজার কার্ডে পণ্য দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ৪ হাজার কার্ডধারীকে পণ্য দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: চকবাজারের ‘অস্ত্রবাজ’ টিটুর হঠাৎ ‘সন্ত্রাসী’ টিনু হওয়ার গল্প

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এভাবে নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এরকম হওয়ার কথা না। টিসিবির ডিলারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে টিসিবির ডিলার নিউ চৌধুরী স্টোরের দায়িত্বে থাকা মো. রোহান বলেন, অনেক সময় একজন ১০-১২টা কার্ড নিয়ে আসে। কার্ড অনুযায়ী আমরা পণ্য দিয়ে থাকি। ওই পণ্য কোথায় যাচ্ছে সেটা তো জানি না। কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সচিব ছাড়া একটি পণ্যও দেওয়ার সুযোগ নেই আমার। পণ্য অবিক্রিত থাকলে কাউন্সিলরকে বুঝিয়ে দিতে হয়। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।

টিসিবির পণ্য প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে থাকা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা পণ্য ডিলারকে বুঝিয়ে দিই। অবিক্রিত পণ্যগুলো ডিলার বুঝিয়ে দেন কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সচিবকে। সেখান থেকে সমন্বয় করে বিক্রি করা হয়। আমাদের কাছে পণ্য ফেরত আসে না।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!