রাস্তার ধারে কাটে দিনরাত, পরিবারের কেউ খোঁজ নেয় না কসবার পপির

সারাক্ষণ মুখে মায়াবি হাসি তাঁর। কখনো এ বাড়ি, আবার কখনো ও বাড়ি ঘুরে বেড়ান। বিভিন্ন কাজে যেকাউকে সহযোগিতা করেন হাসিমুখে। কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে আনমনে বিড়বিড় করেন। আবার কখনও অভিমানী সুরে কিছু বলতে চেয়েও থেমে যান। কেউ খেতে দিলে জুটে খাবার। মানুষের বাড়ির আঙিনা কিংবা রাস্তার ধারে কাটে রাত।

বলছি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার শীলঘাটা এলাকায় প্রায় এক বছর ধরে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন নারী পপির কথা। পরিবার, সন্তান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে নেই কারো সঙ্গে যোগাযোগ। তবে ওই এলাকায় মানুষের কাছে পপি পরিচিত মুখ। কিন্তু এলাকার কেউ জানে না পপি কোথা থেকে, কীভাবে এখানে এসেছেন। চিকিৎসা ও পরিবারের সান্নিধ্যে পপি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নের শীলঘাটা মুসলিমপাড়া এলাকার এক বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলে পপির। কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসিমুখে বলেন ভালো আছি। নাম জানতে চাইলে মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, পপি। বিয়ে ও ছেলে মেয়ের কথা জানতে চাইলে লাজুক হেসে জানান বিয়ে হয়েছে। তবে স্বামীর নাম বলতে না পারলেও পারভেজ নামে তাঁর একটা ছেলে আছে বলে জানান।

পপি জানান, তাঁর বাবার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম মমতাজ, ভাইয়ের নাম দেলোয়ার হোসেন এবং বোনের নাম পান্না। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গোসাইপুর গ্রাম।

স্থানীয়রা জানান, বছরখানেক আগে পপি শীলঘাটা এলাকার মুসলিমপাড়ার জাশেদুল ইসলাম ও জেসমিন আক্তার দম্পতির বাড়ির আঙিনায় কয়েক মাস অবস্থান করেন। এসময় গৃহস্থালি কাজে জেসমিন আক্তারকে সহযোগিতা করতেন পপি। বিনিময়ে পপি পেতেন দুবেলা খাবার আর ঘুমানোর জন্য বাড়ির আঙিনায় বিছানা। অল্পদিনের মধ্যে জেসমিন পারিবারের সদস্য হয়ে উঠেন পপি। তবে এক বাড়িতে বেশিদিন স্থির থাকেন না পপি। কিছুদিন পরপর অন্য বাড়িতে বা রাস্তায় অবস্থান নেন তিনি। মন চাইলে আবারও ফিরে আসেন পুরনোদের কাছে।

জানতে চাইলে জাশেদুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রায় এক বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন পপি শীলঘাটা এলাকায় আসে। তিনি অন্যান্য মানসিক রোগীর তুলনায় অনেকটা স্বাভাবিক এবং বয়সে তরুণী। তার নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি তাকে বাড়ি নিয়ে আসি এবং আমার স্ত্রী বাড়ির আঙিনায় তার থাকার ব্যবস্থা করে। সেই থেকে এলাকার মানুষ তাকে চিনে। পপি বাড়ির নানা কাজে আমার স্ত্রীকে সহযোগিতা করে। আমার স্ত্রীও তাকে খুব আদর-যত্ন করে খেতে দেয় এবং সময় পেলে গল্প করে। তবে মানসিক সমস্যার কারণে পপি এক জায়গায় বেশিদিন স্থির থাকে না। একেক সময় একেক বাড়িতে চলে যায়। এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই পপি এখন পরিচিত মুখ।

তিনি বলেন, পপির সুস্থতায় সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। পপি যেন তার পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে পারে এটাই চাওয়া।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এজন্য দরকার রোগীর পরিবারের আন্তরিক মনোভাব। মানসিক রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে অনেক সময় রোগী বাড়ি ছেড়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে বেরিয়ে পড়ে। এভাবে পরিবার ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে রোগীর অবস্থা দ্রুত আরও খারাপ হতে থাকে। এসব মানসিক রোগীর পরিবারের সান্নিধ্য খুবই দরকার।

পপির সুস্থতায় পরিবার-পরিজন ও সন্তানকে খুঁজে পেতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পরিবার খুঁজে পেলে ০১৯৮৮৩২১৯০০ (ইব্রাহীম জুলহাজ নীল) ও ০১৬৪১৭১৩৮১৭ (জাশেদুল ইসলাম) নম্বরে যোগাযোগ করলে পাওয়া যাবে পপিকে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!