এক সপ্তাহের প্রেমে যেভাবে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন চেয়ারম্যানের মেয়ে

চকরিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের মেয়ে পরিচয়ে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন মুন্নি আক্তার প্রকাশ জান্নাতুল ফেরদৌস (২৮)। সম্পর্কের এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতারণার মাধ্যমে ওই যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ৬ লাখ টাকা। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই যুবক।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) চট্টগ্রাম দ্বিতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে এ মামলা করা হয়।

মামলার আসামি হলেন- কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ভবনের মুন্নি আক্তার প্রকাশ জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাদীর আইনজীবী মো. গোলাম মওলা মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আদালত মামলা আমলে নিয়ে সিআইডিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ জুলাই দুপুরে এক অজ্ঞাত ফোন নম্বর থেকে কল করে চকরিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের মেয়ে পরিচয়ে ভুক্তভোগী যুবকের সঙ্গে আলাপ শুরু করেন প্রতারক মুন্নি। পরদিন ২ জুলাই যুবকের ইমোতে কথা বলার বাহানায় মোবাইল ফোন ঠিক করার কথা বলে কৌশলে নগদ অ্যাকাউন্টে দুহাজার হাতিয়ে নেন ওই তরুণী। এরপর ৩ জুলাই মুন্নির বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন জানিয়ে ফের ২০ হাজার টাকা চাইলে ভুক্তভোগী যুবক সরল বিশ্বাসে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। সেদিন বাবা-মা পরিচয়ে দুজনের সঙ্গে ওই যুবকের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন মুন্নি।

আরও পড়ুন: প্রেমের ফাঁদে ফেলে তরুণীর অন্তরঙ্গ ছবি, ফেসবুকে ভাইরালের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ

এরপর ৪ জুলাই কেনাকাটা করতে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে টাকা হারানোর কথা বলে আবারও এক লাখ টাকা চান মুন্নি। সেই টাকা বাড়িতে গিয়ে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। ভুক্তভোগী যুবক তাকে বিশ্বাস করে বিভিন্ন নম্বর থেকে এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। পরদিন ৫ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাবার হাসপাতালে ভর্তির বিল পরিশোধে আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকার প্রয়োজন দেখালে ওই যুবক আবারও পাঁচটি বিকাশ নম্বর থেকে টাকা পাঠান। পরে হাসপাতাল থেকে বাবাকে ছাড়িয়ে নিতে আবারও ৫০ হাজার টাকা চাইলে কোনো সন্দেহ ছাড়াই টাকা পাঠিয়ে দেন সেই যুবক।

এরপর ৬ জুলাই ঢাকা থেকে চকরিয়া ফেরার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়েছে বলে ওই যুবককে জানান মুন্নি। এসময় দুজনকে অপহরণকারী পরিচয়ে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে তারা পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে তিন লাখ টাকায় বনিবনা হলে সকাল ১০টায় বিভিন্ন মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এসময় বাড়িতে পৌঁছেই সব টাকা যুবকের বন্ধুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন মুন্নি।

সেদিন ৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে লোহাগাড়ায় ব্যাংকে গিয়ে যুবক বন্ধুর অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখেন টাকা আসেনি। তখন মুন্নির মুঠোফোনে ফোন দিলে তাঁর ব্যবহৃত সব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে টাকা দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে ৮ জুলাই যুবককে ইমোতে ফোন দেন মুন্নি। তখন প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন মুন্নি। কিন্তু সেই যুবক আর কোনো টাকা দিতে পারবে না জানালে মুন্নি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কথোপকথনের সকল কল রেকর্ড যুবকের পরিবারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া আইনি ব্যবস্থা নিলে তাকে হত্যার হুমকিও দেন। এরপর ভুক্তভোগী যুবক বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!