অটোরিকশায় অক্সিজেন ছড়াচ্ছেন অক্সিজেনের শামীম

সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা। প্রথম দেখাতেই মনে হবে— এটি সাধারণ কোনো অটোরিকশা নয়। সত্যিই, এটি ‘অনন্য’ এক অটোরিকশা। যে অটোরিকশা ভরিয়ে তোলা হয়েছে সবুজে। আর নগরজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন!

অটোরিকশাটির মালিক শামীম, চালকও তিনি নিজেই। অক্সিজেনের এলাকার বাসিন্দা শামীম একটু ভিন্ন চিন্তা থেকেই নিজের অটোরিকশা ভরিয়ে দিয়েছেন গাছে গাছে। তাঁর এই ছোট্ট অটোরিকশায় রয়েছে প্রায় তিনশ জাতের ফুল! রোপণ করেছেন বিভিন্ন গাছের চারাও! এজন্য তাঁর সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা।

সবুজের সম্ভার নিয়েই প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে ছুটে বেড়ান শামীম। শামীমের অটোরিকশা যখন রাজপথে নামে পথচারীরা তখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। অটোরিকশাটি একটু থামলেই জটলা লাগে পথচারীর। সবুজে ঘেরা অটোরিকশা কাছ থেকে দেখতে ভিড় করেন সব বয়সের মানুষ।

রাজপথের অবাক বিস্ময় শামীমের এই অটোরিকশা

অটোরিকশাটি দেখার পর শিশু থেকে বৃদ্ধ— সবার শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তবে হাসিমুখেই সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কৌতুহল মেটানোর চেষ্টা করেন শামীম। এরপর বিদায়বেলায় সবাই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন— শামীমের মতো কিছু করে সবুজে সবুজে পৃথিবী ভরিয়ে দেওয়ার।

অক্সিজেন এলাকার শহীদ নগরের বাড়িতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শামীম। অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তাতেই চলে তাঁর সংসার। পরিবেশবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব এ অটোরিকশা দিয়েই নয় মাস ধরে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

রাজপথেই কথা হলো শামীমের সঙ্গে। শুরুতেই প্রশ্ন করলাম— শখের বসে, নাকি বিনোদনের জন্য, এমন করার রহস্য কি? মুখে হাসি ছড়িয়ে শামীম বললেন, শুরুতে শখের বসে করেছিলাম। তবে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর স্লোগানটিও মাথায় ছিল।

অন্য রকম এক অটোরিকশা নিয়ে চলতে কেমন লাগে— জিজ্ঞেস করতেই আবারও সেই হাসি। বললেন— চলার পথে আমার অটোরিকশাটি এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রাস্তায় দাঁড়ালে অনেকেই ছুটে আসেন দেখতে। খুব ভালো লাগে তখন। আমাকে দেখে অন্য চালক-মালিকরা অনুপ্রাণিত হবে বলে আশা করছি।

গ্রামের গাড়ি শহরে চালাচ্ছেন পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হয় না— প্রশ্ন করতেই সজোরে মাথা নাড়ালেন। ‘না, রাস্তায় সার্জেন্ট কিংবা ট্রাফিক পুলিশ কেউই আমাকে এখন পর্যন্ত ধরেনি। এ নিয়ে কোনোরকম ঝামেলায় পড়তে হয়নি।’

অক্সিজেনের শামীমের সংসারে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, মেজ মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী, আর ছোট মেয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। সবার ছোট ছেলেটি প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

এই একটি অটোরিকশায় চলে শামীমের ছয় সদস্যের জীবন। এই জীবনটা নিয়ে শামীমও বেশ খুশি। আবার শামীমকে নিয়ে খুশি আশপাশের মানুষরা। কারণ এই অটোরিকশা দিয়েই যে তিনি নগরজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন অক্সিজেন!

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!