মুক্ত হলো রাঙ্গুনিয়া—ক্যাম্প ছেড়ে পালাল পাকিস্তানি সৈন্যরা, বাড়িঘরে দিল আগুন

আজ ১৫ ডিসেম্বর, রাঙ্গুনিয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয়েছিল রাঙ্গুনিয়া। তার আগে ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হানাদার বাহিনীর চার শতাধিক সৈন্যের মৃত্যু ঘটে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সৈন্যরা সকালের দিকে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেলে বিজয়ের লাল সবুজ পতাকা উড়ান মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে রাঙ্গুনিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খায়রুল বশর মুন্সী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর রাঙ্গুনিয়া রানীরহাট, পোমরা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিচিঙ্গা ফরেস্ট অফিস। ডিসেম্বরের শুরু থেকে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা এসব ঘাঁটিতে চলে আসে। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কোদালা চা বাগান থেকে চিচিঙ্গা এলাকা পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিগুলোর চতুর্দিকে অবস্থান নেয়। তখন সহকারী সেক্টর কমান্ডার ছিলেন রাঙামাটি জেলার আশোক মিত্র কারবারি।’

আরও পড়ুন: রাঙ্গুনিয়ায় একই পরিবারের ৩ প্রার্থী—প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি কেন্দ্র দখলের কৌশল

তিনি আরও বলেন, ‘আশোক মিত্র কারবারির কৌশলমতে ১৪ ডিসেম্বর রাত ৯টায় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। রাতভর সংঘর্ষে উপজেলার মুরাদ নগরের আব্দুস সোবহান, মতিউর রহমান, বিপুল দাশ, ফণি মহাজন, মরিয়ম নগর ইউনিয়নের মোহনবাশি, রাতুল বড়ুয়া, বাবুল মুৎসুদ্দি, ছায়ের আহমদ, নাজের শাহ, পোমরা ইউনিয়নের আবুল কাসেম, বশির আহমদ, দৌলত মিয়াসহ প্রায় ৪০-৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চার শতাধিক সৈন্যরও মৃত্যু ঘটে।’

১৫ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে ক্যাম্প ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরের দিকে পালিয়ে যায়। হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার ঘরবাড়ি ও রানীরহাটের দোকানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘাঁটিগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ওইদিন সকাল ৯টায় স্বাধীনতাকামী মানুষেরা রাঙ্গুনিয়ার রাজপথে বিজয় মিছিল করেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে হানাদারমুক্ত দিবস—মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ দাবি

রাঙ্গুনিয়া পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান হানাদারমুক্ত হওয়ার খবর শুনে আমরা যুদ্ধে এগিয়ে যায়। রাতভর যুদ্ধের পর অসংখ্য পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। তখন তাদের অধিকাংশ মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে পাকিস্তানি সৈন্যরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে মরিয়ম নগরের বড় হুজুরের দীঘির পাড়ে মাটিচাপা দেয়। এর আগেও রাজাকার-আল বদরদের সহায়তায় ওই স্থানে শহীদ আহমদ শাহ ও মোহাম্মদ শাহসহ এলাকার অনেক মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করেছিল হানাদাররা।’

সরেজমিনে গণকবর হিসেবে চিহ্নিত স্থানটিতে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ওই স্থানে গণকবরের কোনো চিহ্ন নেই। কেবল ৩টি কবরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ফলক থাকলেও তাতে কারো নাম নেই এরমধ্যে সীমানা পিলার পাচারচক্র ২টি পিলার ভেঙে ফেলে। বর্তমানে একটি কবরের ফলক দৃশ্যমান আছে।

বড় হুজুরের বংশধর মাওলানা ওবায়দুল মোস্তফা নঈমী এ প্রসঙ্গে বলেন, দীঘির পাড়ে গণকবর থাকলেও তা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তির পথে। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের অনুরোধ জানান তিনি।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!