৪ কারণে ‘ব্যতিক্রমী’ লকডাউন

সাম্প্রতিক অতীতে করোনার কারণে অনেক বিধিনিষেধ দেখেছে চট্টগ্রামের মানুষ। বছর কয়েক আগেও এ নগরে হরতালের ডাক পড়ত নিয়মিত। বন্যা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়ও কম দেখেনি নগরবাসী।

কিন্তু এবারের ‘কঠোর লকডাউনে’র প্রথম দুই দিনে নগরের চিত্র ছিল অন্যরকম।

গণপরিবহন চলছে না। প্রধান সড়কের ফুটপাতে নেই পথচারীর ভিড়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি টহল দিচ্ছেন সেনা সদস্যরাও।

স্কুল-কলেজ বন্ধ। আদালতপাড়ায় নীরবতা। মার্কেট-শপিংমলে ঝুলছে তালা। অফিসপাড়ায় নেই চেনা ব্যস্ততা।

বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের যেতে মানা৷ কমিউনিটি সেন্টারে হচ্ছে না বিয়ে-মেজবানে ভাত-মাংসের আয়োজন।

রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং নেই। সামাজিক অনুষ্ঠানে গণজমায়েতেও আছে নিষেধাজ্ঞা।

বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও (২ জুলাই) তাই দেখা গেছে অন্য চট্টগ্রাম।

‘কঠোর লকডাউনে’র দ্বিতীয় দিনে মোটামুটি ‘কড়া” লকডাউনই দেখেছে চট্টগ্রাম।

আগের লকডাউনগুলো বেশ ঢিলেঢালাভাবে কার্যকর হলেও শুক্রবার ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলেছে মূলত চারটি কারণে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া, প্রশাসনের সতর্ক অবস্থান, মার্কেট-বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং মেঘাচ্ছন্ন দিনের কারণে নগরের মানুষ সেভাবে ঘর থেকে বের হননি।

জানা যায়, চট্টগ্রামে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের  মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাই সচেতন মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন কম।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনও এবার যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে আছেন সেনা সদস্যরাও। বৃহস্পতিবার অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে জরিমানা গুনেছেন অনেকে। আটকও হন বেশ কয়েকজন। যেকারণে অপ্রয়োজনে বের হওয়ার প্রবণতা কমেছে।

অন্যদিকে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মার্কেট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ। মানুষ তাই ঘর থেকে বেরিয়েছেনও কম।

এছাড়া এদিন দিনের অনেকটা সময়জুড়ে আকাশে ছিল মেঘ। পাশাপাশি নগরের নিচু এলাকায় জমে থাকা পানি পুরোপুরি সরে না যাওয়ায় রাস্তায় মানুষের ভিড়ও ছিল অন্যদিনের চেয়ে কম।

নগরের অধিকাংশ মানুষ তাই এদিনও ‘বন্দী’ ছিলেন ঘরে। কিছু গাড়ি চলেছে, ঘর থেকে দূর-দূরান্তে বেরিয়েছেন কেউ কেউ, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জরুরি প্রয়োজনে।

বিকেলে নগরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা টাইগারপাস মোড়ে মানুষ ও গাড়ির দেখা মিললেও, ছিল না চেনা ব্যস্ততা। প্রাইভেট কার, মিনি ট্রাকের পাশাপাশি দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলতে দেখা গেছে।

দুপুরে চলতিপথে চোখে পড়েছে প্রায় জনশূন্য আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। নিচের রাস্তায়ও ছিল না চেনা ভিড়।

নগরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা জিইসি মোড়েও ছিল না যানজট। কিছু সময় পর পর দেখা মিলছিল ব্যক্তিগত বাহনের।

নিউমার্কেট এলাকায় চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। এছাড়া নগরের বিভিন্ন স্থানে নজরদারিতে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১ হাজার ২৩২ নমুনা পরীক্ষায় ৪২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ২৮৪ জন নগরের এবং ১৩৭ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

একইসময়ে ৪ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার।

চট্টগ্রামে এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মোট ৫৯ হাজার ৭৩৭টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে।

জেডএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!