‘হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে’ তলিয়ে যাচ্ছে চকবাজার টু বহদ্দারহাট সড়ক, জেগে ঘুমাচ্ছে চসিক—সিডিএ

কাপাসগোলায় ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা

হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের পাইলিং করতে গিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে সড়কের পাশে নালা ও ড্রেন। এতে নগরের চকবাজার টু বহদ্দারহাট সড়কের বড় একটি অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। দেখা দিয়েছে গভীর ফাটল। পরিস্থিতি এমন, যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপদ ঘটতে পারে কাপাসগোলায়।

প্রধান এই সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ ব্লক করে রেখেছে বিল্ডিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আল মারজান কনসালটেন্ট ও জায়গার মালিকরা। ভয়াবহ বিপদ মাথায় নিয়ে ভোগান্তিতে চলছে যান ও জনসাধারণ। বিষয়টিকে লুকানোর চেষ্টা চলছে সমানতালে। ম্যানেজ করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)।

এই দুই সংস্থা দায় সারছে শুধুই নোটিশ দিয়েই। অথচ সড়কে এতবড় ফাটল নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দেখছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, এ ঘটনায় চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

জানা গেছে, চকবাজার-বহদ্দারহাট সড়কের স্টার পার্ক হোটেলের লাগোয়া ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ভবনের পাইলিং ও অবৈধভাবে নালা কেটে পানি নিষ্কাশন করতে গিয়ে সড়কটি দেবে গেছে। সড়কের একপাশ বন্ধ থাকায় বাড়ছে জনভোগান্তি। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এসব দেখভালে থাকা সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান চসিক ও সিডিএর দায়িত্বহীন নীরব ভূমিকাকে দোষছেন সচেতন নাগরিকরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাপাসগোলা সড়কের তেলিপট্টি মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল স্টার পার্কের লাগোয়া ব্যক্তি মালিকানাধীন বহুতল একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ভবনটির কাজের সুবিধার্থে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১৫ ফিট নালা কেটে সেখানে পানির পাইপ সংযুক্ত করে ভবন কর্তৃপক্ষ। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে নালা কাটার কারণে লম্বায় প্রায় ১০০ ফিট এবং প্রস্থে প্রায় ৫ ফিট রাস্তা দেবে যায়।

আরও পড়ুন : ১০ তলা বিল্ডিং উঠল ছাড়পত্র ছাড়াই, হঠাৎ ঘুম ভাঙল পরিবেশের

দেবে যাওয়া রাস্তায় কোনো ধরনের সেফটি ব্যবস্থা না করে কিছু বালুর বস্তা দিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ কারণে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।

শুধু তাই নয়, সড়ক দেবে যাওয়া ও নালা কাটার কারণে সাধারণ পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়েই। রাস্তা দেবে যাওয়ার ফলে সরু হয়ে গেছে সড়ক। আবার ঝুঁকি নিশ্চিত জেনেও এই দেবে যাওয়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নগরের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কটি। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু নির্মাণ বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ভবন কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো মাথাব্যথা।

তারা আরও বলেন, ভবন মালিকরা সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে নালা কাটার কারণে সড়ক দেবে যাওয়ার মূল কারণ। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া ঝুঁকি নিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। প্রাণহানির মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন সচেতন নাগরিকরা।

ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল আরোহী উজ্জ্বল দাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সকালে ব্যক্তিগত একটি কাজে বহদ্দারহাট যাচ্ছিলাম। সকালে হওয়ায় সড়ক ফাঁকা ছিল যার কারণে একটু দ্রুতগতিতে বাইক চালাচ্ছিলাম। তেলিপট্টি মোড় পার হয়ে স্টার পার্কের একটু সামনে যেতেই  সড়কের ওপর বালুর বস্তা দেখে ব্রেক করি। দেখি প্রায় ১০০ ফিটের মতো সড়ক দেবে গেছে। একটি ব্যস্ততম সড়ক দেবে গেছে কিন্তু কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হলো না! নতুন কেউ আসলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ নেই। ভবন নির্মাণের বিধিমালা রয়েছে। বিধিমালা থাকলেও কেউ মানে না। নগরে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া এবং পরবর্তীতে এর ওপর নজর রাখার জন্য সরকারি অনেক বিভাগ রয়েছে। তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো আসলে কী কাজ করছে? দুঃখজনক হচ্ছে, এত বড় অঘটন আবার আড়ালে চলে যায়। ফের ঘটে বড় দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে বহুতল ভবনটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আল মারজান কনসালটেন্টের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মো. এরশাদ আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর যে ভূমিকম্প হয়েছে তার কারণে সড়কটি দেবে গেছে। এখানে আমাদের ভবনের কারণে কোনোভাবে সমস্যা হয়নি। আমরা সিটি করপোরেশন ও সিডিএ কে বিষয়টি জানিয়েছি। তাদের পরিদর্শন টিম এসে দেখে গেছে। সড়কটি ঠিক করতে যা খরচ হবে আমাদের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।

আরও পড়ুন : খুলশীতে খুন—নিজের বিল্ডিংয়ের নিচে ময়লার স্তূপে মালিকের লাশ

যদি ভূমিকম্পের কারণে সড়ক দেবে যায় তাহলে সড়ক ঠিক করতে আপনারা কেন টাকা দিবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারণ আমাদের ভবনের সামনে সড়কটি দেবে গেছে, তাই আমাদের টাকায় ঠিক করে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কোনো নালা কাটিনি। কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি মানুষের হয়। হয়ত ছোটখাটো ভুল আমাদেরও হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বিষয়টি আমরা ঠিক করে নিবো।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের নোটিশ করা হয়েছে। সবাই ১৬ ডিসেম্বরের প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। এটা শেষ হলে সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, দেবে যাওয়া সড়কটি ঠিক করতে যা খরচ হবে সব তারা বহন করবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অথরাইজড অফিসার-১ মো. ইলিয়াসের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

তবে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আমরা তাদের নোটিশ করেছি। যা ক্ষতিপূরণ যাবে তা ভবন কর্তৃপক্ষ বহন করবেন। আমরা বিষয়টি মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। উনার অর্ডার পেলেই কাজ শুরু হবে।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!