মিথ্যা মামলার ফাঁদে শিশু—বিচারকের মামলায় জামিন নিলেন সেই ২ এসআই

বিচারকের করা মামলায় পুলিশের দুই এসআইয়ের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- এসআই আনোয়ার হোসেন (বিপি-৮৫০৪০৫৫২৪৮) ও এসআই সুবীর পাল (বিপি-৮৮১৪১৬৯৪২৪)।

এর আগে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) একই আদালতে দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা। ওইদিন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টার দিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার পাচারের অভিযোগে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামের এক শিশুকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্ত শেষে একই বছরের ৩ অক্টোবর ওই শিশুকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা, পরোয়ানা

এরপর চলতি বছরের ১১ এপ্রিল এজাহার ও দাখিল করা প্রতিবেদনের উপর সাক্ষ্য দেন পুলিশের দুএসআই। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে নির্দোষ বলে রায় দেন আদালত।

আদালত লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে দেখেন, শিশুটির এক আত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্ক বিধান না মেনে দুটি সোনার বার নিয়ে আসেন বাহরাইন থেকে। বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পরিদর্শক সুমনকে আটক করলে তিনি শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি শিশুটির কাছে গচ্ছিত রাখেন।

এদিকে সোর্সের মাধ্যমে এক শিশু অবৈধভাবে সোনার বার বহন করছে এমন সংবাদে পতেঙ্গা থানা পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তাকে আটক করে। পরে এসআই আনোয়ার হোসেন উদ্ধার করা একটি সোনার বার দাবি করে শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। শিশুর মা সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র দেখালেও কোনো কথায় শুনেননি এসআই আনোয়ার। উল্টো শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এমনকি এই মিথ্যা মামলার সমর্থনে তিনি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যও দেন।

অন্যদিকে সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করার পরও তা আমলে না নিয়ে মামলা করেন এসআই আনোয়ার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার বাদী এসআই আনোয়ারকে বাঁচানোর জন্য আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সুবীর পাল। প্রকৃত সত্য জানার পরও মিথ্যা প্রতিবেদনের পক্ষে শপথ নিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যও দেন তিনি।

মামলায় ওই শিশু সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়ার পরও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল তারিখ থেকে ১ মাস ৬ দিন জেলে আটক থাকার পর একই বছর ২৮ মে জামিন পায়।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!