চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা, পরোয়ানা

ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার বাহরাইন থেকে আনার অভিযোগে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুর মা বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরও একটি সোনার বার দাবি করেন পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার। সোনার বার দিতে রাজি না হওয়ায় জুয়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এসআই আনোয়ার। এটি মিথ্যা মামলা জানার পরও জুয়েলের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুবীর পাল।

মিথ্যা মামলা দায়ের, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় এবার ফেঁসে গেছেন পুলিশের ওই দুকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা। আর মামলাটি করেছেন খোদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলার আবেদন করেন শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- পতেঙ্গা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও এসআই সুবীর পাল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুই এসআই’র বিরুদ্ধে মামলার করেছেন ট্রাইবুনালের বিচারক। পেনাল কোডের ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ৫ ২১১ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা করা হয়। তারা মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা রিপোর্ট ও সাক্ষী দিয়েছেন। শিশুটি নির্দোষ হওয়ার পরও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১ মাস ৬ দিন জেলহাজতে আটক ছিল। ওই বছরের ২৮ মে সে জামিন পায়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টার দিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার পাচারের অভিযোগে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন এসআই আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনিও নিজের মতো তদন্ত শেষ করে একই বছরের ৩ অক্টোবর শিশুটিকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চলতি বছরের ১১ এপ্রিল এজাহার ও দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর সাক্ষ্য দেন পুলিশের ওই দুএসআই। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটি নির্দোষ বলে আদালত রায় দেন।

আদালত লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে দেখেন, শিশুটির এক আত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্ক বিধান না মেনে দুটি সোনার বার নিয়ে আসেন বাহারাইন থেকে। বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পরিদর্শক সুমনকে আটক করলে তিনি শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি শিশুটির কাছে গচ্ছিত রাখেন।

এদিকে সোর্সের মাধ্যমে এক শিশু অবৈধভাবে সোনার বার বহন করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে এসআই আনোয়ার হোসেন উদ্ধার করা একটি সোনার বার দাবি করে শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শিশুটির মা সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র দেখালেও তা কানে তোলেননি এসআই আনোয়ার। উল্টো শিশুটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এমনকি এই মিথ্যা মামলার সমর্থনে তিনি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যও দেন।

অন্যদিকে সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করার পরও তা আমলে না নিয়ে মামলা দায়ের করে ওই এসআই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার বাদি এসআই আনোয়ারকে বাঁচানোর জন্য আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা সুবীর পাল। প্রকৃত সত্য জানার পরও মিথ্যা প্রতিবেদনের পক্ষে শপথ নিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন তিনিও।

আরএস/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!