সেই মুজিবুলই জিতলেন বাঁশখালীর চাম্বলের নির্বাচনে, আলোচনায় ২ ভোটকেন্দ্রের ভাইরাল ভিডিও

বাঁশখালী চাম্বল ইউনিয়নে নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নৌকা প্রতীক প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী ৯ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফজলুল কাদের আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৬২ ভোট।

এদিকে এ নির্বাচন নিয়ে আবারও বির্তক তৈরি হয়েছে। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের দুটি ভোটকেন্দ্রের ‘অনিয়মের’ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের দাবি, কয়েকজন সাংবাদিক প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ভোটের পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছেন।

জানা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ড চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনিয়মের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও দুটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে ‘সংঘাত’ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, বিএনপি নেতার ভিন্ন দাবি

নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৯টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু বক্কর মো. সিদ্দিকী বলেন, ভোটকেন্দ্রের যে ভিডিওর দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে তা ওই কেন্দ্রের বুথে দায়িত্বরত পোলিং অফিসার আজিজুল ইসলামের। উনি এক বৃদ্ধ মহিলাকে ভোট কিভাবে দিবেন তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। কেউ ভোট দিতে না জানলে তা বাইরে থেকে শিখিয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে। তবে উনি (পোলিং অফিসার) ভোট প্যানেল বোর্ডের কাছে যাননি। অথচ কতিপয় সাংবাদিক নির্বাচনি বিধিমালা না জেনে ভিডিওসহ সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

৭ নম্বর ওয়ার্ড চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আবু বক্কর বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়া এক মহিলা ভোটারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি মিজানুর রহমান নৌকা প্রতীক প্রার্থীর বুথ কক্ষের পোলিং এজেন্ট। ভোট প্যানেল বোর্ডের বাইরে অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্টরাও ছিলেন। এখানে কোনো ভোটার ভোট দিতে পারেনি এরকম অভিযোগ কেউ করেননি। এরপরও ভোট প্রদানে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে বেলা ১২টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফজলুল কাদের (আনারস মার্কা) সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে।

দুপুর ১টায় নৌকা প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সুন্দর ভোট হচ্ছে। তবে ৭ নম্বর ও ২ নম্বর কেন্দ্রে আনারস মার্কার প্রার্থী বহিরাগত দিয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন।

যোগাযোগ করা হলে চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের রিটানিং কর্মকর্তা রকর চাকমা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুটি কেন্দ্রের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ভোট প্রদানে প্রভাব দেখানোর অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কী জন্য, কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে গত ২৮ মে নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী ইভিএম নিয়ে বেঁফাস বক্তব্য দেওয়ায় গত ৫ জুন নির্বাচন কমিশন চাম্বল ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপর গত ৩ জুলাই কমিশনের উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নির্বাচনের নতুন তারিখ ১৪ জুলাই ঘোষণা করা হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) নির্বাচনের দুদিন আগে কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে আবারও নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ফজলুল কাদের চৌধুরী নামের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে আ.লীগের ভোটারদের লাথি মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দিল বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন

নির্বাচনে ৪ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, ৫০ জন সাধারণ সদস্যসহ ৬৪ জন প্রার্থী ছিলেন। ৯টি ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৯০ জন।

গত ১৫ জুন ১৪ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ইভিএম নিয়ে বেঁফাস বক্তব্যের পর ৫ জুন ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন এবং বেঁফাস বক্তব্যকারী নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেন। এছাড়া অপর এক প্রজ্ঞাপনে আগামী ১৫ জুনের নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে গত ৫ জুন সোমবার রাতে বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মু. ফয়সাল আলম বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। এর আগে গত ১৫ জুন চাম্বল ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১৩ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ইউবি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!