সরকারের লুটপাটের কারণে দেশ রিজার্ভ সংকটে পড়েছে : চট্টগ্রামে জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সরকারের লুটপাটের কারণে দেশ রিজার্ভ সংকটে পড়েছে। দশ বিলিয়ন ডলারের কম হলে কোনো দেশের এলসি হবে না। দেশের ব্যাংকগুলোও খালি করা হয়েছে।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন বিকেলে নগরের একটি কনভেনশন সেন্টারে এ আয়োজন করা হয়।

জিএম কাদের বলেন, এই সরকার জনগণের জবাবদিহিমূলক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। যেকোনো ধরনের সমালোচনা করলে রাষ্ট্রবিরোধী কথা বলে সাইবার আইনে মামলা করা হচ্ছে। সমালোচনা নিতে না পেরে আইন দিয়ে মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। সরকার সাইবার আইন করে জনগণকে মুক্তচিন্তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। শুধু তাই নয়, সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে ও গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দুদক দিয়ে হয়রানি করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছোট কর্মকর্তাদের দুদক দিয়ে হয়রানি করা হয়। কিন্তু বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথম আওয়ামী লীগ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পরে বিএনপি চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইশতেহারের ধারেকাছে যায়নি। সবক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ একটি সুবিধাবাদী দল তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন : দেশকে খাদের কিনার থেকে তুলেছেন শেখ হাসিনা : চট্টগ্রামে শান্তি সমাবেশে আ জ ম নাছির

জিএম কাদের বলেন, আমরা সরকারের অধীনে নির্বাচন করবো না। সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করবো। সেই পথে অনড় হয়ে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তটা কী প্রমাণিত হয়েছে এটা সঠিক। সকলে আমরা একটু অনিশ্চয়তায় আছি। আমরা সবসময় এই আহ্বানটা করে আসছি, এখনও করছি। যা আমরা চাই সকল দল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। বিশেষ করে প্রধান দুইটা দল আপনারা একমতে এক টেবিলে এসে একটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ফর্মূলা তৈরি করুন। যাতে সকলে মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করতে পারি, এটা আমাদের আহ্বান। প্রশ্ন হলো ততদিন পর্যন্ত আমরা কী করবো? সেখানে আপনারা অনেকে বলেছেন, আমরা ক্ষমতার সিঁড়ি হয়ে আছি। ক্ষমতার সিঁড়ি হতে চাই না। আবার বলেছেন, আমরা বিরোধী হয়ে কাজ করতে চাই না অনেকে বলে। এখন আপনি কারো সাথে যান তাহলে ক্ষমতার সিঁড়ি হবেন না? আমরা ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ করছি না, আমরা যুদ্ধ করছি আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল নিয়ে। যেটা জনগণের জনকল্যাণমুখর রাজনীতি, সেই রাজনীতি নিয়ে আমরা জনগণের কাছে চিরজীবন বেঁচে থাকব। সেই সাথে আমরা দেশ শাসনের সুযোগ পাবো। সামনে আমরা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পূরণ করতে পারেনি। সেই কারণে আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদের নিজস্ব লড়াইয়ে আমাদের সক্রিয় রাজনীতি নিয়ে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। যাতে ভবিষ্যতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে সঠিক কাজটি করতে পারি। আমরা শেষ বিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি যেন করতে পারি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি নতুন রুপে এগিয়ে যাবে। জাতীয় পার্টি থেকে তিনশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করব। ৯০ সালের ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল, জাতীয় পার্টিকে কোনো দলে নেওয়া হবে না। কিন্তু এখন বিএনপি বলে কি কি লাগবে? আওয়ামী লীগ বলে আমাদের রেখে চলে যাবেন?

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টিতে জাতীয় পার্টির নৈতিকভাবে সমর্থন রয়েছে। পল্লীবন্ধু হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ যখন অসুস্থ ছিলেন চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যেতে মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জেলে মারা গেলে মারা যাক। সেই বেগম জিয়া আজকে সেটাই ভোগ করছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জহুরুল ইসলাম জহির, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী ও এটিকিউ তাজ রহমান।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!