রঙিন গ্রাফিতিতে ‘নতুন সাজে’ জামালখান

ফুটপাত মিউজিকের পর এবার জামালখানে নজর কাড়ছে দেয়াল গ্রাফিতি। জামালখানে সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই এখন চোখে পড়বে নানা রঙের দেয়াল গ্রাফিতি।

চাঁদের বুড়ি, গোপালভাঁড়, ঠাকুরমার ঝুলি, আলাদিন থেকে শুরু করে দেশি–বিদেশি নানা কার্টুনের চিত্রকর্ম ফুটে উঠেছে জামালখানে। অ্যাকুরিয়াম পার্কের পাশে সড়কের দেয়াল ঘিরে এসব গ্রাফিতি যেন আরো নান্দনিক করে তুলেছে জামালখানকে।

স্বেচ্ছায় একদল শিক্ষার্থীর প্রতিভায় রঙিন হয়ে উঠেছে এসব দেয়াল।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এক্সজিল ও তাঁর বন্ধু এক্সঅফের অনন্য প্রতিভায় ফুটে উঠেছে রঙিন সব গ্রাফিতি।

গ্রাফিতি অঙ্কন নিয়ে জানতে চাইলে এক্সজিল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের দলের নাম ‘এক্স গ্যাং’। আমি এবং আমার বন্ধু এক্সঅফ মিলে আমরাই সর্বপ্রথম চট্টগ্রামকে গ্রাফিতি সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করি৷ দীর্ঘ সময় ধরে আমরা দুজন গ্রাফিতি করেছি৷ পরে আমাদের দলে আমার বন্ধুর ভাই ডিএনবি যুক্ত হয়। সব গ্রাফিতির ডিজাইন কোথায়, কেমন হবে সবকিছু আমরাই ঠিক করি৷ তার ধারাবাহিকতায় জামালখানের দেয়ালে আমরা গ্রাফিতি আঁকা শুরু করি। আমাদের গ্রাফিতি মানুষজন খুব পছন্দ করেছে। পরে জামালখান ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আমাদের পাশে থেকে আরো উৎসাহিত করেছেন। এভাবেই জামালখান গ্রাফিতিতে সেজে উঠছে।

এক্সজিল আরও বলেন, আমরা কেউ পেশাদার আর্টিস্ট না, ভালোবাসা থেকেই শুরু করা এবং এখন আমরা চেষ্টা করছি আমাদের এই প্রতিভা ছড়িয়ে দিতে৷ প্রতিটি গ্রাফিতি এক একটি বার্তা দেয়, এটি অসাধারণ সংস্কৃতিও বটে। এতে দেয়ালে যেমন পোস্টার টাঙানোর সংস্কৃতি দূর হবে, অন্যদিকে মানুষের কাছে এটি একধরনের বিনোদনের খোরাক হয়ে থাকবে।

বর্তমানে এক্সজিলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের জয়িতা, শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী পানংকিও এই চিত্রকর্ম আঁকছেন৷

জামালখানের এসব গ্রাফিতি ঘিরে রয়েছে বসার জন্য উন্মুক্ত জায়গা। রঙিন গ্রাফিতি দেখতে এখন প্রতিদিন জামালখানে আসছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ।

বিকেল হলেই গ্রাফিতি দেখতে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। বহুরূপী এসব রঙিন কার্টুন গ্রাফিতি বিশেষ করে শিশুদের জন্য অন্যরকম বিনোদন হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যারাই এখানে ঘুরতে আসছে সবাই গ্রাফিতির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত৷ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পেশাজীবীরা এখানে এসে ছবি তুলছেন ৷ অনেক শিক্ষার্থী ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশও করছে। এসব চিত্রকর্ম ঘিরে তরুণদের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি। রাত হলেই লাইটের আলোয় বাড়ছে গ্রাফিতির সৌন্দর্য।

আরও পড়ুন: মিরসরাই ট্র্যাজেডি—আহতদের যন্ত্রণা দূর করতে লড়ছে হাটহাজারীর তরুণরা

কথা হয় এসব গ্রাফিতি দেখতে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রিয়ান বিন কবির বলেন, রঙিন গ্রাফিতি জামালখানকে নিঃসন্দেহে আরো নান্দনিক করে তুলেছে। আমিও এসেছি রঙিন এসব দেয়ালগ্রাফি দেখতে।

চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী বলেন, ফেসবুকে কয়েকদিন আগে এসব গ্রাফিতির ছবি দেখে সব বন্ধুরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির পর এখানে এসেছি। সবাই মিলে ছবি তুলছি। রঙিন গ্রাফিতি দেয়ালগুলোকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।

স্কুলপড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বাসা এদিকেই। স্কুল ছুটির পর এখানে ঘুরতে এসেছি৷ এখানে দেয়ালে নানারকম কার্টুনের ছবি দেখতে ভালো লাগছে, তাই বন্ধুরা মিলে রঙিন এসব গ্রাফিতির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি।

অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে আসছেন বাহারি গ্রাফিতি দেখাতে। কথা হয় বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে।

ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে আসা রহিম রহমান বলেন, রঙিন এসব গ্রাফিতি দেখে আমার ছেলেটা অনেক আনন্দিত। এখানে কার্টুনের ছবিগুলো দেখে শিশুরা আনন্দে মেতে উঠেছে৷ নানান ধরনের কার্টুনকে গ্রাফিতিতে দেখতে পাচ্ছে শিশুরা, যা অবশ্যই ইতিবাচক।

এ প্রসঙ্গে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, একদল শিক্ষার্থী মূলত এখানে খালি দেয়ালে স্প্রেসহ প্রয়োজনীয় অঙ্কনসামগ্রী দিয়ে গ্রাফিতি আঁকতে শুরু করে। প্রথমে তাদের বাঁধা দিলেও পরে তাদের এই প্রতিভাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তা করে গ্রাফিতি আঁকতে বলি। যেহেতু পুরো জামালখানের আশপাশে অনেক স্কুল এবং শিশুরা আছে সেটি চিন্তা করে এখানে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের কার্টুন আঁকতে নির্দেশনা দিই। তাদের আমি পারিশ্রমিক দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় কাজটি করে দিচ্ছে। আমি অঙ্কনের জন্য প্রয়োজনীয় যা যা লাগে তা দিয়ে পাশে থেকেছি।

মহসিন স্কুলের বিপরীত পাশের দেয়াল, লোকপ্রশাসন স্কুলের পাশের দেয়ালে, রিমা কমিউনিটি সেন্টারের পাশের দেয়াল; অর্থাৎ জামালখানে যেসব পরিত্যক্ত দেয়াল আছে সবগুলোতেই গ্রাফিতির আকাঁর কাজ শুরু হবে৷ তারুণ্যকে আমাদের বিভিন্ন শিল্প সম্পর্কে জানানোর জন্য এসব দেয়ালে পাট, কুমার, মৃৎ, চামড়া, স্বর্ণ, জামদানিসহ নানা শিল্পকর্ম চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি—যোগ করেন কাউন্সিলর শৈবাল।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!