‘মৃত্যুঝুঁকি’—মোটাতাজার ওষুধে বদলে যাচ্ছে গরু, চিনবেন যেভাবে

হঠাৎ বদলে যাচ্ছে গরুর গঠন। অস্বাভাবিভাবে বাড়ছে গরুর ওজন। স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগে রাতারাতি মোটাতাজা করা হচ্ছে গরু। অসাধু গরু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এমন কাণ্ডে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

কোরবানির জন্য হাট থেকে মোটাতাজা গরু কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন অজস্র ক্রেতা। এসব গরু অনেক সময় বসা থেকে আর উঠতে পারে না। খাবার খায় না। নাক দিয়ে ঝরে সাদা তরল পদার্থ। অনেক সময় দেখা যায়, কোরবানির আগেই মারা গেছে শখের গরু।

কোরবানির হাটে এখন ক্রেতাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মোটাতাজা’ গরু। গরু কেনার ব্যাপারে সতর্ক না হলে মুহূর্তেই ঘটতে পারে বিপদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানে গরুর চাহিদাকে পুঁজি করে অবৈধ বাণিজ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানুষের ক্ষতির কথা চিন্তা না করেই শুধু লাভের জন্য তারা গরুর শরীরে পানি জমিয়ে মোটাতাজা করছে। এজন্য প্রয়োগ করছে বিভিন্ন ওষুধ। এমন গরু জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

দেশের বিভিন্ন জেলার গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী কোরবানের তিনমাস আগে থেকে স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক দিয়ে গরুকে মোটা করেন। কৃষকেরা পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে গরুকে স্টেরয়েড দেন। অনেক ক্ষেত্রেই হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্ররোচনাও থাকে। স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এজাতীয় ওষুধ যেমন— ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। একারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও এলাকার গরুর খামারের মালিক আবদুল হালিমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিবেদক। মোবাইলে প্রতিবেদক নিজেকে গরু ব্যবসায়ী পরিচয় দেন।

হালিম বলেন, গতবছর একজন প্রতিবেশীর কয়েকটি গরু দ্রুত মোটা হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করি। তিনি গরুগুলো বেশ ভালো দামে বিক্রি করেছিলেন। পরে তার (প্রতিবেশীর) কাছে জানতে পারি, এক ধরনের বড়ি খাওয়ালে গরু মোটা হয়। তাঁর দেখাদেখি আমিও ওই বড়ির পাতা আমার ১০টি গরুকে খাইয়েছি। এতে গরুর শরীর অনেক মোটা হয়েছে।

এদিকে মোটতাজা গরু দেখে সরল মনে কিনে কোরবানির হাটে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। একইসঙ্গে নিজের অজান্তে পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা এসব গরুর মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের ফুসফুস ও যকৃতে পানি জমে, কিডনি দুর্বল হয় এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়।

পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু চেনার উপায় হলো— গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিলে তা গর্ত হয়ে যায়। স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। মুখ দিয়ে সবসময় লালা ঝরে এবং শান্ত স্বভাবের হয়। এসব গরুর সামনে খড় বা অন্য খাবার ধরলে তা আগ্রহ নিয়ে খেতে চায় না। গরুর মুখ ও পায়ের গোড়ায় ফোলা থাকে এবং নাক দিয়ে তরল পদার্থ ঝরে।

এদিকে কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায় নিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা পরামর্শ দিয়ে সচেতন করছে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এনিম্যাল হেলথ বিভাগ। পশুবিষয়ক যেকোনো পরামর্শের জন্য তারা যোগাযোগ করতে বলছেন ডা. মাহফিজুল ইসলাম (০১৯৯২০২৬২০০) ও ডা. মোবারক হোসেনের (০১৯৫৫৫৫০৮৭৮) সঙ্গে।

যোগাযোগ করা হলে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এনিম্যাল হেলথ ডিভিশনের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ডা. এমএম মাফিজুল ইসলাম মৃদুল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, স্টেরয়েড দেওয়া গরুর মাংস মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির। এ মাংস খাওয়ার ফলে মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য গরু কেনার সময় দেখেশুনে কেনা উচিত। স্টেরয়েড দেওয়া গরুর শরীর ফোলা ফোলা থাকে। হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গরুর পেছনে রানে, মাংসে চাপ দিলে গর্ত হয়ে বসে যাবে এবং এটি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এছাড়া গরু ঝিমাবে অথবা অত্যাধিক উত্তেজিত থাকবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!