দিনের আলোয় রাতের আনন্দ দেয় নগরের যেসব রেস্টুরেন্ট

নগরের চকবাজারে আলো-আঁধারি রেস্টুরেন্টে চলছে জমজমাট ব্যবসা। মূলত স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করেই গড়ে উঠেছে এসব রেস্টুরেন্ট।

জানা গেছে, মূলত গুলজার মোড়কে কেন্দ্র করে মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নামে অবৈধ বাণিজ্য চলছে। প্রতিদিন হাজারো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম থাকে এলাকাটি। ওই এলাকার দেড় কিলোমিটারে প্রায় ১৫টি কলেজ রয়েছে। কলেজগুলোর মধ্যে প্রাচীন চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ। এছাড়া রয়েছে পুরনো আরো দুটি বিদ্যাপীঠ যেগুলো কলেজে উন্নীত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। এর পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু কোচিং সেন্টার।

সরেজমিন দেখা গেছে, আলো-আঁধারি রেস্টুরেন্টে যাওয়াদের সবাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রী। রেস্টুরেন্টগুলোর ভেতরের পরিবেশ অন্য রেস্টুরেন্টের চেয়ে একেবারে আলাদা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টগুলোতে জ্বলে মৃদু আলো। ছোট ছোট টুল-টেবিলে বসে অবাধে মেলামেশায় মত্ত ছেলে-মেয়েরা।

আরও পড়ুন : চকবাজারে ভাসমান দোকানে বাড়ছে বখাটের আড্ডা, চলে মাদক বেচাকেনাও

এদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ করার ফায়দাও লুটছে আলো-আঁধারি রেস্টুরেন্টগুলো। এসব রেস্টুরেন্টে প্রতিটি খাবারের দাম অন্য রেস্টুরেন্টের চেয়ে অনেক বেশি।

কিছু না খেয়েও বসে থাকা যাবে আলো-আঁধারি রেস্টুরেন্টে। তবে এজন্য ঘণ্টা হিসেবে দিতে হবে টাকা! অথচ রেস্টুরেন্টে ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শান’স কর্ণার (কফি আইল্যান্ড) ২০২২ সালের ১২ জুন সন্ধ্যায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলাও হয়। এরপরও রেস্টুরেন্টটি অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ৪ সেপ্টেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চকবাজার এলাকার আড্ডা, ড্রীমস, প্যারাডাইজ ও ফেইসবুক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কফি আইল্যান্ড, কফি ম্যাক্স, ওয়েল ক্যাফে রেস্টুরেন্ট এখনও বন্ধ হয়নি।

সরেজমিন গুলজার মোড় ঘুরে দেখা গেছে, শান’স কর্নার (কফি আইল্যান্ড), কফি ম্যাক্স, ওয়েল ক্যাফের পরিবেশ একেবারেই আলো-আঁধারি। অপরদিকে কেয়ারি ইলিশিয়ামের আড্ডা ইন, মতি টাওয়ারের আদিল ফুডস ও রোদেলা বিকেলে বসার চেয়ারগুলো আপত্তিকর।

শাহেনশাহ মার্কেটের দ্বিতীয় তলার শান’স কর্ণার (কফি আইল্যান্ড) মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকতেই দেখা গেল মৃদু আলো। রয়েছে বিভিন্ন পকেট রুম। সেখানে চিকেন ফ্রাই, লাচ্ছি ছাড়া অন্যকিছু বিক্রি হয় না। অথচ সাইনবোর্ডে লেখা  চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট।

গুলজার মোড়ের বিপরীতে থাকা কফি ম্যাক্সের ভেতরের পরিবেশ পুরোটাই অন্ধকার। কয়েকটা মৃদু আলোর লাইট জ্বলছে। ভেতরে চেয়ারে বসা ছিল দুই যুবক। তারা জানান, এখানে রান্নার ব্যবস্থা নেই। অর্ডার করলে বাইরে থেকে এনে দেওয়া হয়। পরে তারা কেয়ারি মোড়ের দাবা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরামর্শ বলেন। সেটিও নাকি তাদের একই মালিকের। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি চেয়ার-টেবিল খেলামেলা থাকলেও কয়েকটি আপত্তিকর।

কেয়ারি ইলিশিয়ামের তৃতীয় তলায় উঠে আড্ডা ইন খাবার দোকানের নিচতলা খোলামেলা। তবে দ্বিতীয় তলায় বসানো হয়েছে ছোট টেবিল ও বড় সোফা। যার সবগুলোই আপত্তিকর। সেগুলো কাপলরা দখল করে আছে। এছাড়া আরও কয়েকটি খাবারের দোকানের চেয়ার-টেবিলও একইভাবে তৈরি।

কিচেন চট্টলা রেস্টুরেন্টের উপরে তৃতীয় তলায় অবস্থান ওয়েল ক্যাফের। উঠার সিঁড়িতে সাইনবোর্ড ও দেয়ালে লেখা কাপলদের বসার সু-ব্যবস্থা আছে। দরজা টানতেই ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া গেল। নিচে নেমে আসতেই এক যুবক ভেতর থেকে দরজা খুলে বের হয়ে এলেন। পরে সিঁড়িতে নেমে দেখলেন সঙ্গে কে আছে। তার কাছে কী খাবার আছে জানতে চাইলে বললেন— জুস, কোল্ড ড্রিংকস ছাড়া আর কিছুই নেই। ভাত-বিরিয়ানি নিচের হোটেলে খাওয়া যাবে।

তবে ভেতরের পরিবেশ দেখা গেল একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। যেখানে একজনের চেহারা অন্যজন দেখাই মুশকিল!

মতি টাওয়ারের তৃতীয় তলায় দেখা গেল দুটি খাবারের দোকান— আদিল ফুডস ও রোদেলা বিকেল। দোকানগুলো খোলামেলা হলেও বসার চেয়ারগুলো আপত্তিকর। চেয়ারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে বাইরে থেকে গ্রাহকদের দেখা না যায়।

আরও পড়ুন : দখলের পেটে ফুটপাত—চকবাজারে যানজট, কষ্টের শেষ নেই মানুষের

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাশেদ বলেন, আলো-আঁধারির রেস্টুরেন্টগুলো চলার পথে সবাই দেখছে। এসব রেস্টুরেন্টের কারণে উঠতি ছেলে-মেয়েরা বিপথে পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালী উদ্দিন আকবর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রমজান মাসেও এসব রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। আমি খবর নিয়ে দেখছি। এরপর একটা রেজাল্ট পাবেন আশা করি। এসব রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চকবাজার জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নুরে আল মাহমুদ বলেন, যেহেতু এসব রেস্টুরেন্টের বিষয়ে জানলাম আমরা সরেজমিন তদন্ত করবো। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!