মদ খেয়ে—‘কোটি কোটি’ টাকার ভ্যাট ফাঁকি চট্টগ্রামের সিনিয়রস ক্লাবে

এলিট শ্রেণির ক্লাব ‘চিটাগং সিনিয়রস ক্লাব’। গেস্ট হাউস, জিমনেশিয়াম, বেকারি, সুইমিং পুল, সেলুন থেকে সবকিছুই আছে এখানে। তবে এতকিছুর বাইরেও এর আলাদা পরিচিতি রয়েছে ক্লাব অভ্যন্তরে থাকা বারের জন্য। যে বারে প্রতিদিন উঠে বাহারি মদের ফোয়ারা।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারের কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েই এই ক্লাবের রঙিন আলোয় চলছে সুরা পানের উৎসব। পরিদর্শন, তল্লাশি ও যাচাই শেষে সম্প্রতি রাজস্ব ফাঁকির এ প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। যাতে ধরা পড়েছে পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আট কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি।

নগরের হেলদি সিটি জামাল খানে অবস্থিত চিটাগং সিনিয়রস ক্লাব। ক্লাবটির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ যায় এনবিআরে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এনবিআরের নির্দেশে একটি ‘নিবারক দল’ গঠন করে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। দীর্ঘদিন গোয়েন্দা নজরদারি শেষে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হয় নিবারক দল। এ বিষয়ে মামলা করে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারকে প্রতিবেদনও দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে পণ্য বিক্রি ও সেবা সরবরাহের ওপর প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসাব করা হয়। এ সময়ে ক্লাবটি প্রায় ২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার সেবা সরবরাহ করেছে। যার প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক প্রায় এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু এরমধ্যে এক কোটি ৭৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। মূলত মদ ও সিসা বিক্রির বিপরীতে এই সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়া ওই পাঁচ অর্থবছরে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাটের মধ্যে তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, চিটাগং সিনিয়রস ক্লাব একটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠান। তাই এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, এই ক্লাবের পণ্য কেনাকাটা বা ব্যয়ের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য। চিটাগং সিনিয়রস ক্লাব লিমিটেড ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে পরিমাণ ব্যয় বা কেনাকাটা করেছে, তাতে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু ক্লাবের পক্ষ থেকে ওই পাঁচ অর্থবছরে কেনাকাটা বা ব্যয়ের বিপরীতে কোনো উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি। অর্থাৎ চিটাগং ক্লাব ওই পাঁচ অর্থবছরে যেসব সেবা সরবরাহ করেছে তার বিপরীতে সবমিলিয়ে সাত কোটি ৭৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০৩ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করার কথা।

এদিকে ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনো রাজস্ব ফাঁকি হয়নি। কারণ কোথায়, কীভাবে, কত শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে তা বোঝাতে কখনো আসেননি ভ্যাট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে চিটাগং সিনিয়রস ক্লাবের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইমতিয়াজ ইসলাম বলেন, আগে ক্লাবে ভ্যাট ছিল না। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে আমরা ভ্যাট দেওয়া শুরু করি। পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু হওয়া ভ্যাট এখন লাখ টাকা।

ক্লাবের তিন শতাধিক সদস্য ছাড়া বাইরের কেউ এখানে আসার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাটের কর্মকর্তারা কখনও ক্লাবে আসেননি। আমাদের ডেকে কখনো বলেননি। তাহলে এখন কেন ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!