ব্যাংকের ‘ম্যানেজার’ হয়েও প্রতারণা, ২১ বছর টানতে হবে জেলের ঘানি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ম্যানেজার মো. ইফতেখারুল কবিরকে ২১ বছরের কারাদণ্ডসহ সাড়ে ৩৬ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া একই অভিযোগে আজম চৌধুরীকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এ মামলায় অন্য দুজন খালাস পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ইফতেখারুল কবির নগরের ডবলমুরিং থানার পূর্ব মাদারবাড়ি ৭৩ দারোগারহাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে। আজম চৌধুরী হাটহাজারী ফতেয়াবাদ চিকনদন্ডির আবুল খায়ের চৌধুরীর ছেলে। তিনি নগরের চান্দগাঁও এ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় বসবাস করতেন। এছাড়া খুলশী কনকর্ড টাওয়ার (টাউন সেন্টার) ৯জি ফ্ল্যাটেও বসবাস করতেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মো. ইফতেখারুল কবিরকে বিভিন্ন মেয়াদে ২১ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন: ‘প্রতারণার’ ফাঁদ পেতে নিজেই ফাঁদে আটকাল বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান

পিপি বলেন, আজম চৌধুরীকে বিভিন্ন মেয়াদে ১২ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদলত।

পিপি আরও বলেন, রায় ঘোষণার সময় মো. ইফতেখারুল কবিরকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে আজম চৌধুরী পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা মূলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতি করে ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন মামলার আসামিরা। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার মামলা তদন্ত করে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট চার্জশিট জমা দেন। আদালত ২০২২ সালের ২৯ মে অভিযোগপত্র আমলে নেন। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি চার্জ গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। মামলায় মোট ২১ জনের মধ্যে ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তিন গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. ইফতেখারুল কবিরকে বিভিন্ন ধারায় ২৬ বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি চার লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন একই আদালত। সেই মামলায় বিভিন্ন ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ব্যাংকের হিসাবধারী গ্রাহক মাহমুদুল হাসানকে আজকের মামলার রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!