‘প্রতারণার’ ফাঁদ পেতে নিজেই ফাঁদে আটকাল বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান

একই সম্পদ একাধিক ব্যাংকে, মারল ৫৪ কোটি

একই সম্পদ জামানত হিসেবে দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে নেওয়া খেলাপি ঋণ আদায়ে বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির পরিচালক ফেরদৌস খান আলমগীর (৫৬) ও তার মায়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১০ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

সাজাপ্রাপ্ত ফেরদৌস খান আলমগীর রাউজানের গহিরা মোবারক খীল গ্রামের রাস্তিয়া খান চৌধুরী বাড়ির মো. আয়ুব খানের ছেলে। তাঁর মা মোছাম্মৎ মনোয়ারা বেগম। তারা নগরের খুলশি জাকির হোসেন রোডের তানভির হাউজে বসবাস করেন।

জানা গেছে, একই সম্পদ জামানত হিসেবে দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির পরিচালক ফেরদৌস খান আলমগীর (৫৬)। এক ব্যাংক সম্পত্তি ক্রোক করলেও অন্য ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকায় খেলাপি ঋণ আদায়ে বারবার ব্যর্থ হয় ব্যাংক। পরে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করলে তাঁকে ও তাঁর মাকে দুটি ভিন্ন অর্থঋণ মামলায় ১০ মাসের সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

এ বিষয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ১৩ বছরের পুরনো এবি ব্যাংকের ৩১ কোটি ৭৯ লাখ ২৪ হাজার ৯৬১ টাকা ও ব্যাংক এশিয়ার ২১ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৫১৭ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান আলমগীর ও তাঁর মাকে ১০ মাসের সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক এশিয়ার ইপিজেড শাখা থেকে নেওয়া ঋণ ১৩ বছরেও পরিশোধ না করায় মা ও ছেলে উভয়কে ৫ মাসের সাজা দেন আদালত। এছাড়া ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংক।

অন্যদিকে এবি ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড শাখা থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করে বন্ধকি সম্পত্তি অন্যকে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া ক্রোক করা সম্পত্তি অন্য ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকায় এই সম্পত্তিও বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংক। ফলে এবি ব্যাংকের আবেদনে মা-ছেলেকে ৫ মাসের সাজা দেন আদালত।

এদিকে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে এসে নগরের লালদীঘি এলাকা থেকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ফেরদৌস খান আলমগীর।

অন্যদিকে ফনিক্স ফাইন্স্যাসের এক মামলায় ২০১৯ সালের আগস্টে কানাডা থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ফেরদৌস খানের স্ত্রী মেহেরুন নেছা। পরে জামিন নিয়ে আবারও কানাডায় চলে যান। তাঁর বিরুদ্ধেও খেলাপি ঋণের ১৫টি মামলা রয়েছে।

জানা যায়, ফেরদৌস খান আলমগীর ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির পরিচালক। চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটে সারের ব্যবসা থেকে একপর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন তিন ভাই- ফেরদৌস খান আলমগীর, তানভীর খান আলমগীর ও আজাদ খান আলমগীর। পরে মৎস্য আহরণ, আবাসন, পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক ঋণ সুবিধা নেন।

২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এবি ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে খেলাপি হন ফেরদৌস খান আলমগীর। এসব খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতে অর্ধশতাধিক মামলা করে। এছাড়া সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডেও খেলাপি হয়ে পড়েন তিনি।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!