পূজায়ও অবরোধ—নগরে যান চলাচল স্বাভাবিক, দূরের যাত্রায় ভোগান্তি

সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্যামা পূজার (কালী পূজা) দিন চট্টগ্রামসহ সারাদেশে চলছে বিএনপি ও সমমনা দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি। প্রথমদিনে নগরে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম। এছাড়া আন্তঃজেলার কিছু কিছু বাস চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও ছিল যাত্রী সংকট।

রোববার (১২ নভেম্বর) সরেজমিন নগরের চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও নতুন ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আন্তঃজেলার বিভিন্ন পরিবহনের অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ। তবে সকাল থেকে ঈগল, এলাইন, শাহ আমিন, হানিফ পরিবহনের কিছু আন্তঃজেলা বাস চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসময় যাত্রী সংকটও ছিল এসব পরিবহনে।

এদিকে আমিরাবাদ, চকরিয়া ও কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছিল যাত্রীর অপেক্ষায়। চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া মানুষে প্রতিদিন মুখরিত থাকা নতুন ব্রিজ এলাকার পরিবেশ ছিল একেবারে অচেনা। ১৫ থেকে ২০টি বাস নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে চকরিয়া-কক্সবাজারের উদ্দেশে যায়। এসব গাড়িতে কার আগে কে তুলবে যাত্রী ছিল এমন প্রতিযোগিতা। এছাড়া বাসগুলোর সুপারভাইজারও যাত্রী টানাটানিতে ছিল ব্যস্ত।

নতুন ব্রিজ এলাকায় এনায়েত উল্লাহ নামে এক যাত্রী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি চট্টগ্রাম শহরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কক্সবাজারের বাড়িতে থাকেন বাবা-মা। গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। অবরোধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাসে অগ্নিসংযোগের খবরে দুশ্চিন্তায় আছি। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বাসের হেলপার- সুপারভাইজাররা এসে টানাটানি করছে।

আরও পড়ুন : আবারও ২ দিনের অবরোধের ডাক বিএনপির, সঙ্গে জামায়াত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার মো. রহিম বলেন, অবরোধের কারণে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ। ঝুঁকি নিয়ে কিছু বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। কিন্তু বাসে অগ্নিসংযোগের ভয়ে মানুষজন তেমন চলাচল করছে না। আগে যেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে একটা বাস যাত্রী লোড করে ছেড়ে যেতে, এখন সেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়ও বাস লোড করা যাচ্ছে না।

একই বিষয়ে ঈগল পরিবহনের নতুন ব্রিজ এলাকার কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নুরুল কবির বলেন, স্বাভাবিক দিনে ভোর থেকে সকাল ১১টার মধ্যে আমাদের শতাধিক বাস চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যেত। অবরোধের কারণে যাত্রীর অভাবে একই সময়ে মাত্র ৫-৬টি বাস চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। মানুষের চলাচল একদম কম। কিছু কিছু বাস স্বল্প যাত্রী নিয়ে গেছে।

এদিকে আজ সনাতন সম্প্রদায়ের শ্যামা পূজা উপলক্ষে নগরজুড়ে রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে। ফলে চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে চট্টগ্রাম নগরে সিটি বাস, টেম্পোসহ অন্যান্য গণপরিবহনের চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল ছিল কিছুটা কম।

অন্যদিকে পূজা উপলক্ষে আজকের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনে এ অনুরোধ জানিয়ে পরিষদ সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেছিলেন, ১২ নভেম্বর শ্যামা পূজা। এই পূজা দুর্গাপূজার মতো উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়। তাই এদিন ডাকা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পূজার দিনও অবরোধ কর্মসূচি চলমান রাখে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ঢাকায় সমাবেশ ডাকে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। সেদিন প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে কর্মসূচি না রাখার আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ। তবে তাতে কোনো রাজনৈতিক দল সাড়া না দিয়ে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে।

জেএন/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!