মিতু খুনে জড়িত ‘এসপি’ বাবুলসহ ৭ জন, পিবিআইয়ের চার্জশিট নিলেন আদালত

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।

সোমবার (১০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবদুল হালিমের আদালত শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার ডকেট ও ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এতে সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে। পরে আসামিপক্ষে নারাজি এবং পুনঃতদন্তের আবেদন করলে আদালত খারিজ করে দেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কারাগারে এসপি বাবুল, পিবিআইয়ের চোখে ৭ খুনি—ফয়সালা কাল

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা আদালতে তিনটি আবেদন করেছি। এতে উচ্চ আদালতের বেশকিছু রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো স্টাডি করে আদালত আদেশ দেবেন।

তিনি বলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের ডিভিশনের আবেদন করা হয়েছে। আদালত মঞ্জুর করে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া বাবুল আক্তারের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে এক ঘণ্টা সময় চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত সেটিও মঞ্জুর করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তারেক নামে একজন সাক্ষী নারাজির জন্য সময়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মিতু খুনের দায়ে স্বামী বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পুলিশ প্রসিকিউশন শাখায় চার্জশিট জমা দেয় পিবিআই। মামলায় বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়।

চার্জশিটভুক্ত বাকি ৬ আসামি হলেন-মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুসা ও খায়রুল ইসলাম কালু। এদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক রয়েছেন। ভোলা রয়েছেন জামিনে। কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন।

এদিকে পিবিআইয়ের চার্জশিটে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- আবু নছর, শাহজামান, সাইদুল ইসলাম সিকদার, নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম। এদের মধ্যে নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।

২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এ ঘটনায় বাবুল জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। পরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুলের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর ধীরে ধীরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার জট খুলতে থাকে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ মে মিতু খুনে বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। একইদিন বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। মামলার দুদিন আগে বাবুলকে ঢাকা থেকে আটক করা হয় । পরে মিতুর বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

আরও পড়ুন: মিতু খুন—পিবিআইয়ের ২০৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিটে ‘এসপি’ বাবুল আক্তারই প্রধান আসামি

এরপর আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১৭ মে বাবুলকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি জবানবন্দি দেননি। একপর্যায়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তখন থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে।

আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, মিতুর বাবার করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত সেটি গ্রহণ করেন। তবে বাবুল আক্তারের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন নাকচ করা হয়।

২০ পৃষ্ঠার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সেই নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে বাবুলের। বিষয়টি জানার পর স্ত্রী মিতুর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল।

একপর্যায়ে খুনিদের ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করে মিতুকে খুন করা হয়। বাবুলকে এ কাজে সহায়তা করেন তার বিশ্বস্ত সোর্স মুসা। পরে পূর্ব পরিকল্পনা মতো জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে বলে প্রচার করা হয়।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!