৫ লাখ টাকা না পেয়ে যুবকের পায়ে ‘গুলি’ চালান ওসি কামরুজ্জামান

বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন অসহায় এক মা। মামলায় ৪ এসআই, এক এএসআই ও এক সোর্সকে আসামি করা হয়েছে।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি করা হয়।

এদিকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন: শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে গুলি করে খুন করল মাকে

অভিযোগ রয়েছে, দাবি করা চাঁদার টাকা না পেয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবকের পায়ে গুলি করে মুমূর্ষ অবস্থায় বায়েজিদ লিংক রোডে ফেলে যান ওসি কামরুজ্জামান। এ ঘটনায় আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন সাইফুলের মা ছেনোয়ারা বেগম।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- বায়েজিদ থানার এসআই মেহের অসীম দাশ (বিপি- ৮৮১৭১৯৯৯৮৪), এসআই মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভির, এসআই নূরনবী (বিপি- ৭৭৯৭০৬০৮৭৪), এএসআই মো. রবিউল হোসেন ও সোর্স শাহজাহান প্রকাশ থানার সোর্স আকাশ আমিন।

সোর্স আকাশ আমিন জুট মিল মোহাম্মদ নগর এলাকার ভূঁইয়া সাহেবের বাড়ির লেদু মিয়ার ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে বায়েজিদ থানার আমিন জুট মিল বার্মা কলোনি নুরুল আমিনের বাড়ি থেকে পতেঙ্গার নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হোটেল ছেনোয়ারায় যাচ্ছিলেন সাইফুল ইসলাম। এসময় সোর্স আকাশ ফোন করে তাকে বলেন, দ্রুত অক্সিজেন মোড় হোটেল জামানে আসতে।

আরও পড়ুন: দৌড়ে খাটের নিচে লুকিয়েও রক্ষা পেল না যুবক, মাথা—ঘাড়ে গুলি

এরপর সাইফুল বাবার দেওয়া মোটরসাইকেলে হোটেল জামানে উপস্থিত হন। রাত ১০টার দিকে সোর্স আকাশের সঙ্গে হোটেলে বসে কথা বলার সময় বায়েজিদ থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা তাকে ঘিরে ফেলেন। তবে নাম না জানা আরও দুজন সেসময় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় ওসি কামরুজ্জামান সাইফুলের শার্টের কলার চেপে ধরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন। দুহাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় হোটেলের নিচে নামিয়ে একটি সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যান। গাড়িটি কিছুদূর যেতেই ওসি কামরুজ্জামান ফোনকলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘সাইফুলকে ধরে ফেলেছি। আজ তাকে ফিনিশ করব। ইউনিফর্ম পড়ে জামান হোটেলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করুন। এডিসি স্যারের নির্দেশ।’

এরপর প্রায় দুঘণ্টা ঘুরার পর বায়োজিদ লিংক রোডে গিয়ে গাড়ি থামানো হয়। এর কিছু দূরে অন্য একটি পুলিশের গাড়ি ছিল। এসময় ওসি কামরুজ্জামান ও এসআই মেহের অসীম দাশ গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সোর্স আকাশ একটি থলে নিয়ে তাদের কাছে আসেন।

এরপর এসআই মেহের অসীম দাশ গাড়িতে উঠে সাইফুলকে বলেন, ‘ওপর থেকে তোমাকে ক্রসফায়ার দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। এখন আমাদের ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে ছেড়ে দিব।

এসময় সাইফুল বলেন, আমার কাছে এত টাকা নেই। কোথা থেকে দেবো টাকা। আমি কোনো দোষ করিনি। আমি টাকা দেব কেন? আমাকে আদালতে সোপর্দ করুন। আমি আদালতের আদেশ মেনে চলব।

এ কথা বলার পরপরই সাইফুলকে কলার চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন ওসি কামরুজ্জামান। এরপর বায়েজিদ লিংক রোডের নির্জন স্থানে নিয়ে মাটিতে মাথা উপর করে ফেলে দেন। ওসিকে এ কাজে সহায়তা করেন এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই মো. সাইফুল ইসলাম ও এসআই কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভির।

এ সময় ওসি কামরুজ্জামান সাইফুলের বাম পায়ের হাঁটুর উপরে এক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর মেহের অসীম দাশও একই পায়ে এক রাউন্ড গুলি করে বেশ কয়েকটি ফাঁকা ফায়ার দেন।

আরও পড়ুন: চকরিয়ায় খুন—আদর চেয়ারম্যানের সামনেই কোপানো হয় আমিরকে, পালাতে চাইলে গুলি

এরপর সাইফুল অজ্ঞান হয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে তাকে ফেলে চলে আসেন। পরে জ্ঞান ফেরার পর সাইফুল দেখেন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এদিকে হাসপাতালের রেফারেন্সে রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাইফুলের বাম পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে পুরো পা কেটে ফেলে দেওয়া হয়। পা ড্রেসিংয়ের পর অস্ত্র আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে তাকে চালান দেওয়া হয়। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেলও (চট্টমেট্রো-ল-১৬-৬৬৮২) ফেরত দেয়নি।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!