চট্টগ্রামে ছাদখোলা বাসের আনন্দ নিতে পারছে না পর্যটকরা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের ছাদখোলা বাসে ভ্রমণ সাধারণ হলেও চট্টগ্রামের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ছাদখোলা বাসে চড়ে শহরের সৌন্দর্য উপভোগ একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা৷ প্রতিদিন ছাদখোলা বাসে চড়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে পর্যটকরা। ফলে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ছাদখোলা পর্যটক বাসটি এখন পরিণত হয়েছে লোকাল বাসে। টিকিটবিহীন, নির্ধারিত সিটের চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করায় দিন দিন যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে পর্যটকদের। এ নিয়ে অনেক পর্যটক ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।

পর্যটকরা বলেছেন, টিকিট সিস্টেম চালু না থাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে। কে কার আগে দৌড়ে উঠে সিট ধরবে সেই প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিনিয়ত৷ নির্ধারিত সিটের বাইরে দ্বিগুণ মানুষ বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছে কষ্ট করে। এতে নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছে না। সিট যত, টিকিট তত বিক্রি করলে এ ভোগান্তি হতো না।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোগান্তি কমাতে নতুন আরও দুটি পর্যটক বাস নামানো হবে শিগগির।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২৫ জুন দুপুর ৩টায় নিউমার্কেট এলাকা ছেড়ে টাইগারপাস মোড়ে আসে পর্যটক বাস। গাড়ি আসার ১ ঘণ্টা আগে থেকে সেখানে হাজির পর্যটকরা। বাস আসা মাত্রই পর্যটকদের মধ্যে শুরু হয় উঠার প্রতিযোগিতা। যে আগে গাড়িতে উঠতে পারে সেই বসার সিট পেয়েছে। বাকিদের যেতে হয়েছে দাঁড়িয়ে। এমন সিস্টেমের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নারী পর্যটকদের। পুরুষরা ধাক্কাধাক্কি করে উঠতে পারলেও অনেক নারী ভিড় ঠেলে ওপরে উঠতে পারেননি। আবার অনেকে বাস ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে এসেও ভিড়ের কারণে জায়গা না হওয়ায় ভ্রমণবঞ্চিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ‘ভয়ঙ্কর’ মেলকুম গিরিপথে পর্যটকদের যেতে দিচ্ছে না বন বিভাগ

নগরের হালিশহর নয়াবাজার মৌসুমী আবাসিক এলাকা থেকে আসা সায়মা ও জায়েদ দম্পতি টাইগারপাস মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন পর্যটক বাসের জন্য। কিন্তু গাড়িতে উঠে বসার জায়গা না পেয়ে বিপাকে পড়েন। জায়েদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আগে এসেও লাভ হলো না, বাসে জায়গা পাইনি। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করা কষ্টসাধ্য। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পর্যটক জায়মা বলেন, সিট যত, টিকিট তত বিক্রি করলে এমন ভোগান্তি হতো না। কোনো সিস্টেম নেই। সিটের তুলনায় পর্যটক বেশি। তাই এখন লোকাল বাসের মতো যেতে হচ্ছে।

আরেক পর্যটক ইশফাক বলেন,পর্যটক বাস মানে কী? রিল্যাক্সে যাওয়া-আসা করা। যাওয়ার সময় আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করব। এখন দেখছি সিটে বসেও ভ্রমণ উপভোগ্য হচ্ছে না। কারণ আমার সামনে ৫ জন দাঁড়িয়ে আছে। সিটভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করলে পর্যটকদের জন্য ভালো হয়।

এদিকে ২৫ জুন বেলা তিনটায় নিউমার্কেট থেকে টাইগার পাস–ডিসি পার্ক হয়ে পতেঙ্গা যায় পর্যটক বাস। কিন্তু সেখানেও ছিল ভোগান্তি। তিনটায় রওনা হয়ে বাসটি ফেরার কথা সন্ধ্যা ৭টায়। কিন্তু এদিন পতেঙ্গা থেকে বাসটি ছাড়া হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আধঘণ্টা সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি পর্যটকরা জানত না।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নির্ধারিত সিটের বাইরে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যাবেই। এখন সম্পূর্ণ সিটিং ব্যবস্থা চালু করা যাবে না। কারণ অনেক সময় বাসগুলো লসে চালানো হয়।

টিকিট সিস্টেম চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখব।

আধঘণ্টা আগে পতেঙ্গা থেকে পর্যটক বাস ছাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিচ্ছি৷

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বর্তমানে দুটি পর্যটক বাস দেওয়া হয়েছে। বাসের ডিমান্ড বেড়েছে এমন মেসেজ আমাদের কাছে এসেছে। আরও দুটি বাস আমাদের রিজার্ভ আছে। এগুলোও শিগগির চালু হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জুন প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে পর্যটকদের জন্য চালু করা হয় বিআরটিসির দুটি বিশেষ বাস। এর মধ্যে একটি ছাদখোলা। ওইদিন দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাস চলাচল সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!