ক্রাইমের রাজা—সিটিজি ক্রাইমের মানিক, নিজেই ক্রাইম করে বেড়ান

স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েও তিনি সাংবাদিক

চলাফেরা করেন দাপট নিয়ে। কথায় কথায় মানুষকে দেন হুমকি। কারণ তিনি যে অসীম ক্ষমতাধর ‘সাংবাদিক’।

শুধু সাংবাদিক নন, তিন তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যানও তিনি। যদিও একটিরও অনুমোদন নেই সরকারের।

আবার নামসর্বস্ব এক জাতীয় দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদকও তিনি! যদিও তিনি পেরুতে পারেননি মাধ্যমিকের গণ্ডি!

ক্ষমতাধর এ ব্যক্তি হলেন— আজগর আলী মানিক।

মানিকের আছে ৩শ সাংবাদিক!
সাংবাদিক নিয়োগ দিতে কিছুদিন পরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন মানিক। তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে যোগ্যতা নয়, প্রয়োজন টাকা! তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলে যেকাউকেই তিনি ‘সাংবাদিক’ বানিয়ে দেন। আর সেই ‘সাংবাদিক কার্ড’ ঝুলিয়ে দেদারছে চাঁদাবাজি করে নিয়োগপ্রাপ্তরা। এভাবে দেশজুড়ে অন্তত তিনশজনকে সাংবাদিক বানিয়েছেন মানিক। সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে যাদের আসল কাজই হলো মানুষকে ব্ল্যাকমেল করে চাঁদা আদায় করা।

আয়ের মূল উৎস চাঁদাবাজি
সবার কাছে নিজেকে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিলেও মানিকের মূল পেশা ‘চাঁদাবাজি’। এটিই তাঁর আয়ের প্রধান আয়ের উৎস। আর এ চাঁদাবাজিতে তাঁর হাতিয়ার— সিটিজি ক্রাইম টিভি, সিটিজি টিভি ও বার্তা টিভি। কারণ অনুমোদনহীন এই তিনটি টিভিরই যে চেয়ারম্যান তিনি!

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের ‘সিপ্লাস’সহ বন্ধ হলো ১৭৮ নিউজ পোর্টাল

আবার মাঝে মাঝে জাতীয় দৈনিক সরেজমিন বার্তার নির্বাহী সম্পাদক পরিচয়েও চলে চাঁদাবাজি। মানিকের খপ্পরে পড়ে অনেককেই দিয়ে হয়েছে টাকা। মূলত সম্মান বাঁচাতেই তারা বাধ্য হয়ে চাঁদা দিয়েছেন। আর যারা চাঁদা দিতে রাজি হতেন না তাদের দেওয়া হতো হুমকি-ধমকি। তাঁর হয়রানির শিকার হয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেছেন, আবার কেউ মামলা ঠুকেছেন আদালতে।

তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে চাঁদাবাজি মামলা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ। এছাড়া বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও বাঁশখালী থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

মানিকের সঙ্গে আছেন কাউন্সিলর টিনুও

সিটিজি ক্রাইম টিভির চেয়ারম্যান মানিক। আর সেই টিভির পরিচালক চকবাজারের আলোচিত কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু। সিটিজি ক্রাইমের পরিচালক পরিচয়ে চকবাজার এলাকার কাপাসগোলার রোডে একটি একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছিলেন টিনু।

পুলিশ কর্মকর্তার কাছেও চাঁদা দাবি
২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বরের ঘটনা সেটি। সিটিজি ক্রাইম টিভির পরিচয়ে পটিয়া থানায় সংবাদ সংগ্রহে যান তিনজন। এরপর তারা পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দাবি করে বসেন চাঁদা। তৎক্ষণাৎ আটক করা হলো তিনজকে। তারা হলেন– শাহেদুল ইসলাম সাগর (৩০), রতন বড়ুয়া (৪৩) ও গাড়িচালক আনোয়ার হোসেন (৩৩)৷

আরও পড়ুন: তারাও সাংবাদিক—দাপট দেখিয়ে বিনা টাকায় মদ না পেয়ে ভাঙচুর

এ ঘটনায় সিটিজি ক্রাইম টিভির চেয়ারম্যান আজগর আলী মানিকসহ আটক তিনজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করে।

মানিকের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন
২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর আজগর আলী মানিকের বিরুদ্ধে হয় মানববন্ধন। তাঁর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তারা সিটিজি ক্রাইম বন্ধের দাবি জানান। একইসঙ্গে আজগর আলী মানিকের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

অবশেষে র‌্যাবের জালে
প্রতারণা, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে আজগর আলী মানিককে আটক করে র‌্যাব-৪ একটি দল।
এ বিষয়ে র‌্যাব-৪ সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আ ন ম এমরান খান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আজগর আলী মানিক নামে একজনকে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করেছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া আইপি টিভির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার কার্ড দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
তিনি আরও বলেন, আটক ব্যক্তি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজ করেছিলেন। দুবছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে একই কায়দায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। তিনি নিরীহ মানুষের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানিসহ ১০টি মামলা রয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!