চট্টগ্রামে তরুণী খুন করে লুকিয়ে ছিল কিশোরগঞ্জে, ২ খুনিকে ধরল হালিশহরের পুলিশ

লুঙ্গি-গামছা পরে ছদ্মবেশে খুনের দুআসামিকে গ্রেপ্তার করেছে হালিশহর থানা পুলিশ। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে কিশোরগঞ্জের নিকলী থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) হালিশহর থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন।

গ্রেপ্তার দুআসামি হলেন- মো. জামিন (২৪) ও মো. মোস্তফা (২২)।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের হালিশহর থানাধীন এ ব্লকের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রোডের ১১ নম্বর বাসার ভেতর স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২৭) খুন করেন স্বামী মো. জামিন। খুনে জামিনকে সহায়তা করে মোস্তফা। ঘটনার পর নিহতের বাবা মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা করেন।

উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ তারা ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করত না। কিশোরগঞ্জের নিকলী এলাকার মানুষ সাধারণত কৃষিনির্ভর। তাই তাদের চলাফেরা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ওই এলাকার পোশাক লুঙ্গি ও গামছা। তাই আমাদের টিম লুঙ্গি-গামছা পড়ে এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে গোয়েন্দা তথ্যে সেলুনে জামিনের চুল কাটার খবরে সেই দোকানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে আরেক আসামি মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মূলত পারিবারিক কলহকেই কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম আদালতে পুলিশের গাড়ি পিষে মারল যুবককে

হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, হত্যার রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেপ্তারে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড বলে ধারনা করছি। তবে তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সুফল কুমার দাশ বলেন, হত্যার পর নিহতের বাবা মামলা করলে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে আসামির গ্রামের বাড়ি নিকলী এলাকায় গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করি।

মামলা সূত্র জানা যায়, এক বছর আগে রাবেয়া আক্তার তার প্রথম সংসারের দুকন্যা সন্তানসহ আসামি মো. জামিন বিয়ে করেন। পরে রাবেয়ার সঙ্গে জামিনের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এই বিরোধ সমাধানের জন্য রাবেয়ার বাবা জামিনের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

নিহত রাবেয়া আক্তার হালিশহর থানার বি ব্লকের হান্নানের মালিকানাধীন মিডওয়ে অ্যাপারেলস নামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। স্বামী জামিন প্রতিনিয়ত তাকে সন্দেহ করায় দুমাস আগে রাবেয়া চাকরি ছেড়ে দেন।

এরপর সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে রাবেয়া তার বাবার চায়ের দোকানের পাশে রাস্তায় পিঠা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু এ কাজ তার স্বামী পছন্দ করতেন না। ঘটনার কয়েকদিন আগে এনজিও থেকে ঋণ নিতে একটি ফরমে রাবেয়াকে স্বাক্ষর দিতে বলেন তার স্বামী। কিন্তু স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানায় রাবেয়া। এরপর তারা দুজন তর্কে জড়ান। এই কলহকে কেন্দ্র করে ১৪ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে জামিন কাজ শেষে হালিশহর থানার পাবলিক স্কুলের মোড়ে মোস্তফাসহ মিলে রাবেয়াকে খুনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জামিন ছুরি নিয়ে তার বাসায় যান এবং মোস্তফা পেছনে গিয়ে জামিনের পাশের রুমে ঢুকেন।

জামিন ঘরে ডুকে তার মেয়ে মিম আক্তার জান্নাতকে ঘর থেকে বাইরে যেতে বলে। মিম বাসা থেকে বের হয়ে তার নানার দোকানে গিয়ে জানায় তার বাবা ছুরি নিয়ে ঘরে ঢুকে তাকে বাইরে যেতে বলেছে। তবে এসময়ের মধ্যে মোস্তফা পাশের রুম থেকে জামিনের রুমে যান। রাবেয়া নাস্তার জন্য রান্নাঘরে গেলে মোস্তফা রাবেয়াকে জাপটে ধরেন এবং জামিন ছুরি দিয়ে তার গলার টান মারে। এরপর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে।

রাবেয়া চিৎকার করলে মোস্তফা ও জামিন আবার ছুরি চালায়। এসময় রাবেয়া দৌড়ে তার বাবার দোকানের সামনে রাস্তায় পড়ে যায় এবং জামিন ও মোস্তফা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি খালে ছুড়ে মারে। পরে হালিশহর থানার ফইল্যাতলী বাজারের হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে রাবেয়াকে নিহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

আরএন/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!